রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: বিজেপি ও তৃণমূল-বিজিপিএম জোটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাহাড়ে এবার তৃতীয় ফ্রন্টের জল্পনা শুরু। সেই জল্পনাকে উসকে দিলেন পাহাড়ের এক সময়ের বেতাজ বাদশা বিমল গুরুং। মঙ্গলবার দার্জিলিংয়ের সিংমারিতে হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ড এবং কার্সিয়াংয়ের বিক্ষুব্ধ বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বিমল অবশ্য এই বৈঠককে সৌজন্যমূলক বলে দাবি করেছেন। আবার অজয় বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূলের থেকে দূরত্ব রেখে চলার কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বুধবার পাহাড়ের একটি প্রতিনিধিদল দিল্লিতে যাচ্ছে।
রোশন গিরির নেতৃত্বে ইতিমধ্যে মোর্চার একটি প্রতিনিধিদল দিল্লিতে রয়েছে। ফের অজয়দের দিল্লি যাওয়া নিয়ে নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে। বিমল বলছেন, ‘যুব মোর্চা ২৮ মার্চ পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে বৈঠক ডেকেছে। পরদিন অর্থাৎ ২৯ মার্চ আমরা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডেকেছি। সেদিনই দলের অবস্থান স্পষ্ট করা হবে।’
দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্টের সঙ্গে কার্সিয়াংয়ের বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মার দীর্ঘদিনের বিরোধ। সাংসদ পাহাড়ে এলে তাঁকে কোনও কর্মসূচিতে ডাকা হয় না বলে আগেই সরব হয়েছিলেন বিধায়ক। লোকসভা ভোট এগিয়ে আসতেই তিনি ঘোষণা করেছিলেন, দার্জিলিং থেকে বিজেপি ভূমিপুত্রকে প্রার্থী না করলে তিনি নির্দল হিসাবে লড়াই করবেন। কিন্তু দল রাজু বিস্টকেই পুনরায় টিকিট দিয়েছে। বিজেপির প্রার্থীতালিকা প্রকাশের পরেই বিষ্ণুপ্রসাদ জানিয়ে দেন, বিজেপি ভূমিপূত্র পায়নি। তাই তিনি পূর্ব ঘোষণা মতোই নির্দল লড়বেন।
অন্যদিকে, রাহুল গান্ধির ভারত জোড়ো যাত্রায় অংশ নিয়ে লোকসভা ভোটে কংগ্রেসকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছিলেন হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ড। তিনি দিল্লিতে গিয়ে রাহুলের সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন। দার্জিলিং থেকে কংগ্রেস অজয়কে প্রার্থী করতে পারে এমন জল্পনা এখনও রয়েছে। এরই মাঝে এদিন দুপুরে সিংমারিতে মোর্চার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান অজয় এডওয়ার্ড। শিলিগুড়ি থেকে তিনি সরাসরি দার্জিলিংয়ের সিংমারিতে পৌঁছান। প্রায় ৪০ মিনিট বিমলের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে অজয় বলেন, ‘আমরা বুধবার দিল্লিতে যাচ্ছি। এই নির্বাচনে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থনের কোনও প্রশ্নই নেই। বিজেপি ১৫ বছর ধরে মিথ্যা কথা বলে ভোট নিয়েছে। আত্মসম্মান থাকতে গোর্খারা আর বিজেপিকে ভোট দেবে না। গোর্খা হয়ে তৃণমূলকেও ভোট দেব না। আমরা দু’-তিনদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।’
কার্সিয়াংয়ের বিধায়কের বক্তব্য, ‘এদিন দার্জিলিংয়েই ছিলাম। তাই বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে গিয়ে দেখা করেছি। পাহাড়ের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে, অজয় এডওয়ার্ডদের সঙ্গেও আমার কোনও সম্পর্ক নেই। আগেই বলেছি, আমি লোকসভা ভোটে একা লড়ব। সেই মতোই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
সকলেই বৈঠকটিকে ‘সৌজন্যমূলক’ আখ্যা দিলেও ব্যাপারটা যে এত সহজ নয়, তা ভালোই জানেন পাকদণ্ডির রাজনীতিবিদরা। তাই ২৯ মার্চ বিমল কোন অবস্থান স্পষ্ট করেন, আপাতত সবার নজর সেদিকেই।