শিবশংকর সূত্রধর, ভেটাগুড়ি: ভেটাগুড়ি (Bhetaguri) মানেই জিলিপি। গত পাঁচ বছরে ভেটাগুড়ি পরিচিত হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর গ্রাম হিসাবে। তিনি কেন্দ্রের মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক (Nisith Pramanik)। গ্রামের ছেলে ‘বিট্টু’ সামলাচ্ছেন দেশের স্বরাষ্ট্র, ক্রীড়া ও যুবমন্ত্রক। স্বভাবতই তাঁকে ঘিরে গ্রামবাসীদের উন্নয়নের প্রত্যাশা ছিল। ভেটাগুড়ির এই দুই জনপ্রিয়তার অদ্ভুত মিল। প্রথমটি রাসমেলা আর দ্বিতীয়টি নির্বাচন বা বড় কর্মসূচিতে ছাড়া অন্য সময় দেখা মেলে না। তাই ভেটাগুড়িজুড়ে কার্যত অনুন্নয়নের ছবি স্পষ্ট।
কোচবিহার-দিনহাটা রাজ্য সড়কের বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে নিশীথের ছবি সাঁটা বড় বড় গেট। চারপাশে অজস্ত্র বিজেপির পতাকা। জায়গাটি দিনহাটা-১ (Dinhata) ব্লকের ভেটাগুড়ি। খারিজা বালাডাঙ্গায় হাই রোডের পাশ দিয়ে একটি রাস্তা সোজা চলে গিয়েছে। গোটা রাস্তাটি ভাঙাচোরা। বেরিয়ে আছে পাথর। খানিকটা দূরেই দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মমতা পাল। কতদিন ধরে রাস্তাটির এ দশা? জবাব, ‘তাও চার-পাঁচ বছর তো হবেই।’
আপনারা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পড়শি। তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি? উত্তর, ‘তিনিও এপথেই যাতায়াত করেন। রাস্তা ঠিক না করা হলে তো সবারই সমস্যা।’ মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা বা কথা হয়? জবাব এল, ‘হ্যাঁ, হয় বৈকি। ওঁর বাড়িতে গেলে কথা বলেন। রাস্তায়ও দুই-একবার কথা হয়েছে।’
ওই ভাঙা রাস্তা ধরে কিছুটা এগোতেই নজরে এল একটি বড় বাড়ি। বাড়ি নয়স দুর্গ বললে অত্যুক্তি হবে না। সদর দরজায় বসা কেন্দ্রীয় বাহিনীর একদল সশস্ত্র জওয়ান। কয়েকজন অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে বাড়ির সামনে ঘোরাফেরা করছেন।
মালুম হল এটিই মন্ত্রীর বাড়ি। মূল দরজা থেকে সামান্য দূরে অন্তত জনা পঞ্চাশেক মানুষের ভিড়। কিছুটা এগিয়ে যেতেই রাস্তার ধারে বসে থার্মোকলের ফুল বানাচ্ছিলেন পারুল কার্জি। গ্রামের রাস্তাঘাট, পানীয় জল, চিকিৎসা পরিষেবা কেমন? প্রশ্ন করতেই পাশের একটি ট্যাপকল দেখিয়ে হতাশার সুরে বললেন, ‘ওই যে দেখছেন ট্যাপকল। ওতে জল প্রায় আসে না বললেই চলে। মাঝেমধ্যে জলের দেখা মিললেও এতো ধীরে, যে কেউ জল নিতে দাঁড়াতে চান না। দিল্লির মন্ত্রী তো মন্ত্রীর মতোই থাকেন। তাঁর দেখাই পাওয়া যায় না। গ্রামের সমস্যার কথা আর কী বলব, কত বলব?’
যে রাস্তার পাশে নিশীথের বাড়ি, তার ঠিক উলটো দিকের রাস্তা চলে গিয়েছে ভেটাগুড়ি রেল স্টেশনের দিকে। খারিজা বালাডাঙ্গার স্টেশন রোডের পাশের রাস্তাগুলিতে উন্নয়নের নামগন্ধ নেই। কিছু রাস্তায় এখনও পিচ পড়েনি। পাথরগুলি হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছে। পাশের খেতে গোরু চরানো পুষ্প বর্মন বললেন, ‘বর্যায় জলকাদায় চলাচলে সমস্যা হয়। পাকা নর্দমা প্রয়োজন। পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। চারদিকে এতো উন্নয়নের কথা শুনি। এখানে তার চিহ্ন নেই।’ পাশেই দাঁড়ানো সুশীল বর্মনের কথায়, ‘অনেকদিন আগে মন্ত্রী মিটিং করে গিয়েছেন। তারপর থেকে তো তাঁকে আর দেখিনি। এলাকার অনেক কাজ বাকি। এগুলি করা প্রয়োজন।’ পথবাতির স্তম্ভ দেখিয়ে তিনি বললেন, ‘আগে এই এলাকা অন্ধকারে ডুবে থাকতো। কয়েকমাস আগে পথবাতিগুলি লাগানো হয়েছে।’
ভেঁটাগুড়ি ঘুরে এটা স্পষ্ট, রাজ্য সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া এখানে পৌঁছায়নি। এবিষয়ে নিশীথও নীরব। তাঁর দেখা না মেলার বিস্তর অভিযোগ। অনেকেই তাঁকে শেষ কবে দেখেছেন মনে করতে পারেননি। তবে অন্যদের দাবি, নিশীথের বাড়িতে নাকি তাঁদের অবারিত দ্বার।