ফালাকাটা: প্রায় ১১ বছর পর রাজ্যে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সিলেবাস বদল হচ্ছে। সেইসঙ্গে একটি বার্ষিক পরীক্ষার বদলে চালু হচ্ছে সিমেস্টার পদ্ধতি। সদ্য একাদশ উত্তীর্ণ পড়ুয়া তথা এবার মাধ্যমিকে রাজ্যে সম্ভাব্য প্রথম চন্দ্রচূড় সেন এই নতুন শিক্ষানীতিকে সমর্থন জানিয়েছে। চলতি বছর উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ রাজ্যে সম্ভাব্য প্রথম অভীক দাসও সিমেস্টার প্রথা নিয়ে আশাবাদী। দুই পরীক্ষায় সফল দুজনের মধ্যে অবশ্য চন্দ্রচূড় আবার এই নয়া শিক্ষা পদ্ধতির প্রথম ব্যাচ হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই সে পুরোদমে পড়াশোনাও শুরু করে দিয়েছে। তবে হাতের সামনে নতুন সিলেবাস, বই বা মডেল প্রশ্নপত্র কোনওটাই নেই। তাই, চন্দ্রচূড়ের মতো বহু পড়ুয়াই উদ্বিগ্ন।
এ ব্যাপারে চন্দ্রচূড় সেনের কথায়, ‘একাদশে ভর্তি হয়েছি। সেক্ষেত্রে নয়া শিক্ষানীতির আমি প্রথম ব্যাচের পড়ুয়া। সেন্টাল বোর্ডগুলিকে অনুসরণ করেই নতুন সিলেবাস বানানো হয়েছে। এটা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধা হবে। তবে এখনও বই, মডেল প্রশ্নপত্র হাতে পাইনি। আশা করছি বোর্ড এব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা করবে।’ আর অভীকের কথায়, ‘সিমেস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষায় অনেক সুবিধা আছে। কেউ প্রথম সিমেস্টারে আশানুরূপ ফল না করতে পারলে দ্বিতীয় সিমেস্টারে সুযোগ থাকছে। এছাড়া এমসিকিউ-র জন্য বই খুঁটিয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়বে। আমি আশাবাদী, এতে পড়ুয়ারা বেশি নম্বরও তুলতে পারবে।’
এ প্রসঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে খবর, একাদশ-দ্বাদশে নয়া পাঠক্রমেই ২০২৪ থেকে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক বদলের পাশাপাশি মূল্যায়নও সরল করা হয়েছে। এজন্য একাদশ-দ্বাদশে মোট চারটি সিমেস্টার নেওয়া হবে। নয়া প্রক্রিয়া ঘোষণার পরেই পাঠ্যপুস্তক, মডেল প্রশ্নাবলি কী হবে তা নিয়ে সদ্য মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের মধ্যে ধোঁয়াশা ছড়িয়েছে। যদিও এবিষয়ে সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘ক’দিনের মধ্যেই গোটা বিষয়টি পড়ুয়াদের সামনে স্পষ্ট করা হবে। এজন্য উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।’
আলিপুরদুয়ার ম্যাক উইলিয়াম হাইস্কুলের সদ্য একাদশে ভর্তি হওয়া শুভম দত্তর কথায়, ‘শুনেছি, নয়া প্রক্রিয়ায় প্রথম সিমেস্টার হবে সেপ্টেম্বরে। অথচ এখনও ক্লাসই শুরু হয়নি। নেই বই, মডেল প্রশ্ন। কী পড়ব, কী পরীক্ষা দেব বুঝতে পারছি না।’
ফালাকাটা হাইস্কুলে একাদশে ভর্তি হওয়া ছাত্রী নবরুমা রায় জানায়, বিজ্ঞান নিয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছি। টিউশনও শুরু করেছি। কিন্তু এখনও সিলেবাস সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়নি। বোর্ড দ্রুত এগুলি প্রকাশ করলে সুবিধা হয়।
পড়ুয়াদের পাশাপাশি নয়া শিক্ষানীতি নিয়ে অভিভাবকরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ফালাকাটার এক পড়ুয়ার অভিভাবক মনোজ চৌধুরীর কথায়, ‘সিলেবাস, বইপত্র, মডেল প্রশ্নাবলি কোনও কিছু প্রকাশিত না করেই শিক্ষানীতি বদল করা ঠিক হচ্ছে না। এতে সাধারণ পড়ুয়ারা অনেক সমস্যায় পড়বে। যদি নতুন শিক্ষানীতি কার্যকর করতেই হয় তাহলে অন্তত সিলেবাস ও বইপত্রগুলি খুব তাড়াতাড়ি পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া দরকার ছিল।’