রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: মেচি সেতু পেরোলেই ক্যাসিনোর(Casino) হাতছানি। আর শুধু ক্যাসিনো খেলাই বা বলি কেন, টাকা ছড়ালে সেখানে এক ছাদের তলায় বিনোদনের অঢেল আয়োজন হাতের নাগালে। তা সে মদ্যপান হোক বা নাচগান সহ অন্য কিছু। আর তাতে মজে গিয়ে সপ্তাহান্তে দলে দলে অনেকেই ছুটছেন নেপালে। পানিট্যাঙ্কিতে গাড়ি রেখে ওপারে গিয়ে নেপালের(Nepal) গাড়ি ধরে গন্তব্যে। সূত্রের খবর, প্রতি সপ্তাহে ভারতীয়দের কাছ থেকে এভাবেই কোটি কোটি টাকা রোজগার করছে নেপাল। টাকা লেনদেন হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। তার জন্য নতুন কাউন্টারও খোলা হচ্ছে চম্পাসারির গান্ধি মোড়ে। সেখানে টাকা জমা রেখেই ওপারে ‘জুয়া’ খেলতে যাচ্ছেন অনেকে।
শুধু শিলিগুড়ি, শিবমন্দির বা বাগডোগরা নয়, ইসলামপুর, ডালখোলা, রায়গঞ্জ থেকেও অল্পবয়সিরা ক্যাসিনোয় গা ভাসিয়েছে। শনিবার এবং রবিবার সহ ভারতের সরকারি ছুটির দিনগুলিতে ভিড় বাড়ছে কাঁকরভিটা, ধুলাবাড়ি, বিরতা মোড়ের ক্যাসিনোয়। সবচেয়ে বেশি ভিড় জমছে ধুলাবাড়ির বিলাসবহুল হোটেল মেচি ক্রাউনে। এসএসবি’র যুক্তি, ভারত-নেপালের মধ্যে অবাধ যাতায়াত রয়েছে। পরিচয়পত্র নিয়ে যে কেউ যাতায়াত করতে পারে। কাজেই কে কোন উদ্দেশ্যে যাচ্ছে তা বোঝা সম্ভব নয়।পানিট্যাঙ্কির কোনও একটি স্ট্যান্ডে গাড়ি রেখে মেচি সেতু পেরিয়ে কাঁকরভিটায় পা রাখলেই হল। কাঁকরভিটা, ধুলাবাড়ি, বিরতা মোড়, ইলমে ক্যাসিনোর রমরমা কারবার চলছে। সেদেশের মানুষের জন্য নিষিদ্ধ এই জুয়ার ঠেকে ভারতীয়দের প্রবেশ অবাধ। মূলত প্রতি শনিবার এবং রবিবার ক্যাসিনোগুলিতে ভিড় করছেন ভারতীয়রা। সবচেয়ে বেশি ভিড় হচ্ছে ধুলাবাড়ি থেকে ২০০ মিটার আগে থাকা একটি বিলাসবহুল হোটেলে। মেচি ক্রাউন নামে ওই হোটেলে একই ছাদের নীচে ক্যাসিনো খেলার পাশাপাশি সুরাপান, নাচ-গানের আসর এবং অঢেল খাবারের আয়োজন থাকছে। আবার রাতে হোটেল থেকে ভারত(India) সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।
প্রতি রাতে ভারতীয়রা এক লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জুয়া খেলছেন। সঙ্গে খাবার, আমোদপ্রমোদের জন্য আরও টাকা খরচ হচ্ছে। ফলে হোটেল ব্যবসায়ীদের ব্যবসার রমরমা। শুধু ভারতীয় হিসাবে একটি সচিত্র পরিচয়পত্র দেখালেই কেল্লা ফতে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে কীভাবে নেপালে যাচ্ছেন ভারতীয়রা? প্রশ্ন করতেই জবাব এলে, কেউ পকেটে টাকা নিয়ে যান না, আবার জুয়ায় জিতে টাকা নিয়ে ফিরতেও হয় না। সমস্ত লেনদেন হুন্ডিতে হয়।
কী এই হুন্ডি?
ধরুন নেপালে গিয়ে প্রচুর টাকা প্রয়োজন। কিন্তু পানিট্যাঙ্কির মেচি সীমান্ত হয়ে নেপালে যাতায়াতের সময় এসএসবি এবং নেপাল পুলিশের কড়া তল্লাশির মুখে পড়তে হয়। তাই লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে ওপারে যাতায়াত ঝুঁকির। সেইজন্যই হুন্ডি। হুন্ডিতে টাকা জমা দিলেই সব সমস্যার সমাধান। ধরুন কেউ হুন্ডিতে ১০ লক্ষ টাকা জমা দিলেন। তাঁকে এখান থেকে একটি ১০, ২০ অথবা ৫০ টাকার নোট দেওয়া হবে। ওই নোটটি দেখালেই ওপারে গিয়ে পুরো টাকা মিলবে। টাকা নেওয়ার পর ওই নোট ছিঁড়ে ফেলতে হয়। যাতে ওই নোটের নম্বর দেখিয়ে আবার কেউ টাকা দাবি করতে না পারে। আসলে এটা দুই দেশের মধ্যে চলা অবৈধ একটা কারবার। আগে মহাবীরস্থান এলাকায় হুন্ডি ছিল। বর্তমানে চম্পাসারির গান্ধি মোড় সংলগ্ন জায়গায় আরও একটি হুন্ডি চালু হয়েছে। এই দুটি জায়গায় টাকা জমা দিয়েই নেপালে যাচ্ছেন সিংহভাগ মানুষ।