শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: পুলিশের পর এবার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় (North Bengal University) কর্তৃপক্ষের কাছে লাইফলং লার্নিং অ্যান্ড এক্সটেনশন বিভাগের শিক্ষক সিদ্ধার্থশংকর লাহার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে শাস্তির দাবি করল মৃত গবেষকের পরিবার। বুধবার সেই অভিযোগ (Researcher Death Case) জমা পড়েছে কর্তৃপক্ষের কাছে। ইতিমধ্যেই সেই অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল কমপ্লেইন কমিটিতে (ICC) আলোচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দেবাশিস দত্ত।
পুলিশ তদন্ত করায় এতদিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে লাহার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার উপায় ছিল না। এবার পরিবারের অভিযোগ পাওয়ায় কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ করতে পারবে বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ জমা পড়তেই অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি নিলেন সিদ্ধার্থশংকর। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বৃহস্পতিবার তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটির আবেদন করেছেন। অন্যদিকে, পুলিশের খাতায় তিনি ‘পলাতক’। কবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরবেন, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। এই পরিস্থিতিতে মহাবিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের গবেষক এবং ছাত্রছাত্রীরা। থমকে গিয়েছে গবেষণার কাজকর্ম।
লাহা ওই বিভাগের একমাত্র স্থায়ী শিক্ষক। বিভাগে আর মাত্র দুজন চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, লাহার তত্ত্বাবধানে ছয়জন গবেষক কাজ করছেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভাগের গোটা তিরিশেক গবেষক কাজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকদের কাছে। সেই গবেষকদের সঙ্গে সমন্বয় রাখার কাজও করতেন লাহা। আপাতত অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অনিল ভুঁইমালিকে লাইফলংয়ের প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে একসঙ্গে দুই বিভাগের দায়িত্ব সামলানো যে সহজ কাজ নয় সেটা ভালোই জানেন শিক্ষকরা।
এই পরিস্থিতিতে ছাত্র ও গবেষকদের কী হবে? কলা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ডিন মহেন্দ্রনাথ রায়ের কথা, ‘আমরা সবটাই নজরে রেখেছি। কিছুদিন দেখে নিই। তারপর গবেষকদের অন্য সুপারভাইজারদের তত্ত্বাবধানে কাজের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেইমতো আলোচনা করে পদক্ষেপ করব আমরা।’ কিছুদিন আগে বটানির এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ তুলেছিলেন এক গবেষক। সেই শিক্ষককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। অভিযোগকারী গবেষককে অন্য সুপারভাইজার দেওয়ার কথা ছিল। সেই সমস্যা এখনও মেটেনি। লাহার তত্ত্বাবধানে থাকা গবেষকদেরও কি একই হাল হবে? সেই প্রশ্নই এখন ঘুরছে ক্যাম্পাসে।
বৃহস্পতিবার লাইফলং বিভাগের পড়ুয়াদের শিক্ষামূলক ভ্রমণে গুয়াহাটি যাওয়ার কথা ছিল। তার যাবতীয় দায়িত্ব ছিল লাহার উপর। তাঁকে সেখানে যেতে নিষেধ করে কর্তৃপক্ষ। তাঁর বদলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আধিকারিককে গুয়াহাটি পাঠানো হয়েছে বলেই জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার। লাহার তত্ত্বাবধানে থাকা এক গবেষকের কথা, ‘আমরা চিন্তায় রয়েছি। কাজকর্ম কিছুই হচ্ছে না। কী হবে বুঝতে পারছি না। কর্তৃপক্ষও স্পষ্ট করে কিছু বলছে না।’ অনীলের কথা, ‘রেজিস্ট্রার ওই বিষয়ে পদক্ষেপ করবেন।’ দেবাশিসের বক্তব্য, ‘আইন মেনে পদক্ষেপ হবে। লাইফলং বিভাগে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিদ্যা সহ বিভিন্ন বিষয়ের ছাত্রছাত্রীরা রয়েছেন। আমরা বিষয় অনুসারে সেই গবেষকদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে কাজের সুযোগ করে দিতে পারি। পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ হবে।’