নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার বরাবরই বলে থাকে দেশের স্বাধীনতার শতবর্ষে ২০৪৭ সালে ভারতকে ‘বিশ্বগুরু’ রূপে গড়ে তোলা হবে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বহুবার এই লক্ষ্যে নিবিষ্ট হওয়ার জন্য তাঁর দল ও কেন্দ্রীয় সরকারের পদাধিকারীদের নির্দেশ দিয়েছেন। শনিবার সেই একই রূপরেখার আভাস মিলেছে বিরোধী শিবিরের তরফেও, যেখানে শুধুই ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের চৌহদ্দিতে আটকে থেকে নয়, বরং তার ঊর্ধ্বে পরবর্তী সময়ের জন্য স্বপ্নের ভারত গড়ার লক্ষ্যে একত্রে কাজ করবে ঐক্যবদ্ধ বিরোধীরা, সাফ জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন।
আগামী ১৭-১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুর তাজ ওয়েস্ট এন্ড হোটেলে বসতে চলেছে সম-মনোভাবাপন্ন বিরোধী দলীয় শিবিরের দ্বিতীয় দফার বৈঠক, যেখানে অংশ নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সনিয়া গান্ধি, রাহুল গান্ধি, মল্লিকার্জুন খড়গে, সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, নীতিশ কুমার এবং তেজস্বী যাদবের মতো প্রথমসারির বিরোধী নেতা নেত্রীরা। বিরোধী দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এবারের ‘সামিটে’ ২০-টিরও বেশি বিরোধী দল কর্নাটকের রাজধানীতে মিলিত হবে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের রণনীতি তৈরির উদ্দেশ্যে। পাটনার পরে ব্যাঙ্গালুরুর বিরোধী ‘সামিট’ সম-মনোভাবাপন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ঐক্যকে আরও মজবুত করবে, শনিবার দাবি জানান বিরোধী শিবিরের অন্যতম সদস্য তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা দলনেতা, বর্ষীয়ান সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন৷ তাঁর কথায়, ‘আমাদের লক্ষ্য পরিষ্কার৷ নিঃস্বার্থভাবে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে সবাইকে। ২০২৪ এবং তার পরবর্তী সময়ে স্বপ্নের ভারত নির্মাণের লক্ষ্যই হবে আমাদের একমাত্র সংকল্প।’
জুন মাসে বিহার মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের আহ্বানে পাটনার বিরোধী বৈঠকে শুধুমাত্র সলতে পাকানোর কাজ করা হয়েছিল যেখানে সার্বিক বিরোধী ঐক্য গঠন করাই ছিল প্রধান কাজ৷ সেই কাজ করতে গিয়েও ধাক্কা খেয়েছে বিরোধী শিবির৷ এনসিপির ছত্রছায়া ছেড়ে বিজেপির হাত ধরেছেন শরদ পাওয়ারের দীর্ঘদিনের ছায়াসঙ্গী প্রফুল প্যাটেল। অন্যদিকে কাকা শরদকে ছেড়ে শিবসেনা(বিক্ষুদ্ধ)-বিজেপি জোটে শামিল হয়েছেন ভাইপো অজিত পাওয়ারও। এই আবহে শিক্ষা নিয়েছে বিরোধী শিবির। রাতারাতি ‘গদ্দার’ তকমা প্রদান করা হয়েছে পাটনার বৈঠকে উপস্থিত প্রফুল প্যাটেলকে। স্থির হয়েছে ব্যাঙ্গালুরুর বৈঠকে জোর দেওয়া হবে আগামীর রূপরেখা তৈরির উপরে। বিরোধী শিবির এদিন সাফ জানিয়েছে ব্যাঙ্গালুরুর বৈঠকের আলোচ্যসূচি নিয়ে কোনও শব্দই আগাম জানানো হবে না। সূত্রের দাবি, ১৭-১৮ জুলাইয়ের বৈঠকে ব্যাঙ্গালুরুতে যেমন স্থির হবে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের রণকৌশল তেমনি আলোচনা হবে সংসদের বাদল অধিবেশনের রণনীতি নিয়েও। একইসাথে গেরুয়া শিবিরের ধাঁচেই ২০২৪ এর নির্বাচনের ঊর্ধ্বে অদূর ভবিষ্যতে বিরোধী রূপরেখা নির্মাণ নিয়ে আলোচনায় শাণ দেবেন বিরোধীরা।
অন্যদিকে, এদিন যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিরোধী শিবির সূত্রে দাবি, ব্যাঙ্গালুরুর বিরোধী বৈঠকে যোগ দিতে চলেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি৷ শনিবার বিরোধী শিবির সূত্রে বলা হয়, দিল্লি অর্ডিন্যান্স ইস্যুতে কংগ্রেসের সঙ্গে চলতে থাকা আপের মতান্তর দূর হয়ে গিয়েছে যেখানে কংগ্রেস সূত্রে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দলকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে গণতন্ত্রের হিতবিরোধী কোনও পদক্ষেপ সমর্থন করবে না কংগ্রেস৷ অর্থাত্ দিল্লি সরকারের অধীনস্থ আইএএস-দের নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশে মোদি সরকারের প্রণীত অর্ডিন্যান্স যখন সংসদে বিল হিসেবে পেশ করা হবে তখন তার বিরুদ্ধেই ভোট দেবে কংগ্রেস। শনিবার নয়াদিল্লিতে কংগ্রেসের স্ট্র্যাটেজি বৈঠকেই এই মর্মে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলেই দলীয় সূত্রের দাবি। কংগ্রেসের তরফে অর্ডিন্যান্স ইস্যুতে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরেই অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল সর্বশক্তি নিয়ে ব্যাঙ্গালুরুর বৈঠকে যোগদান করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বলে দলীয় সূত্রের দাবি।