শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি: কোমর থেকে শরীর তাঁর অসাড়। পায়ে ভর করে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। বলতে পারেন না কথাও। তারপরেও এক পায়ে জুতো পরেই কোনওভাবে হুইলচেয়ারটা ঠেলে এগিয়ে চলছিলেন বছর বাইশের ছেলেটি। হাতে তাঁর রয়েছে গুটিকয়েক লটারির (Lottery) টিকিট। পথচলতি মানুষের কাছে টিকিট ঠেকিয়ে কোনওভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন, ‘একটা টিকিট নেবেন?’ মহম্মদ নৌশাদের এই লড়াই দেখে অনেকেই টিকিট নিয়ে নেন। জানার চেষ্টা করেন, ‘এভাবে লড়াই কেন? বাড়িতে কে আছে?’ চোখ বড় বড় করে অনেক কিছুই যেন বলতে চান নৌশাদ।
কী বলতে চান? তা জানতে টিকিয়াপাড়ায় তাঁর বাড়ি যেতেই চারদিকে শুধুই অসহায়তার ছবি। ঘরের মধ্যেই একপাশে জামাকাপড় ইস্ত্রির ছোট দোকানটায় দাঁড়ানো নৌশাদের মা জাকিলা বেগমের চোখে জল, ‘সব ঠিক ছিল। করোনার সময় স্বামী মহম্মদ শাহিদ মারা যাওয়ার পরেই সবটা যেন বদলে গেল।’
বাড়ির দেওয়ালের বিভিন্ন জায়গায় ফাঁক রয়েছে। ছোট দুই ঘরের ওই টিনের চালের বাড়িতেই মা, দুই বোন ও এক ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন নৌশাদ। এক দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ঘরের সঙ্গে থাকা ইস্ত্রির ওই দোকানে কাজ করে সংসার চালাতেন মহম্মদ শাহিদ। তবে করোনার সময় আচমকা শাহিদের মৃত্যু সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে। অর্থনৈতিক কষ্ট এতটাই জাঁকিয়ে বসে যে বাড়ির ছোট ছেলে মহম্মদ আজাদ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েই পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। দুই বোন অবশ্য এখনও সামসিয়া হাই মাদ্রাসায় পড়তে যায়। ইস্ত্রির কাজের দায়িত্ব জাকিলা নিলেও অর্ডার আগের মতো আসে না। মা, ভাই, বোনের কষ্ট দেখে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে সংসারের জন্য কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন মহম্মদ নৌশাদ। লটারির টিকিট বিক্রিকেই পেশা করে নেন তিনি। নৌশাদ কোনওভাবে হুইলচেয়ার ঠেলতে ঠেলতে টিকিয়াপাড়া থেকে এসএফ রোড (SF Road) পর্যন্ত চলে যান। পথচলতি মানুষকে হাতের ইশারায় অনুরোধ করেন। তাও একশোটার মতো লটারির টিকিট বিক্রি করে ফেলেন। জাকিলা বলছিলেন, ‘উপার্জন করা টাকা অনেক সময় নৌশাদ নিয়ে ফেরার সময় কিছু দুষ্কৃতী সেটা ছিনিয়ে নেয়। তাই মাঝেমধ্যে আমি ওকে খুঁজতে বের হই। ও ঠিক রয়েছে কি না, সেটা জানার জন্য।’ তবে এসবকিছুর মধ্যেও বেরিয়ে আসে, অর্থনৈতিক কষ্ট ও বঞ্চনার কথা।
নৌশাদের দিকে তাকিয়েই জাকিলা বলে চললেন, ‘র্যাশনে পাওয়া চাল, নৌশাদের বিশেষভাবে সক্ষমের ভাতা দিয়েই সংসার চলে। মাসে সব মিলিয়ে চার হাজার টাকাও ওঠে না। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য ফর্ম ফিলআপ করেছিলাম। এখনও সে সুবিধার আওতায় পড়িনি।’ ওয়ার্ড কাউন্সিলার সম্প্রীতা দাস বলছিলেন, ‘আসলে জাকিলার কাগজপত্র বিহারের হওয়ায় লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সুবিধা দেওয়া যাচ্ছে না। তবে আমরা ওই পরিবারের পাশে সবসময় থাকার চেষ্টা করছি।’ আর এসবকিছুর মধ্যেই নৌশাদ করুণ চোখে লটারির টিকিট এগিয়ে ইশারায় বলার চেষ্টা করলেন, ‘একটু লটারির টিকিট নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়ান।’
রাজগঞ্জ: রাজগঞ্জের কালীনগরের করতোয়া নদীর সেতুর পাশেই অবস্থিত শ্মশানঘাট। রাজগঞ্জ পোস্ট অফিস মোড় হয়ে কালীনগর যেতেই…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: নির্বাচনি প্রচার (Election campaign) গিয়ে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে (Jagannath temple) পুজো…
আমেদাবাদ: সোমবার আমেদাবাদ বিমানবন্দরে চার ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করল গুজরাট পুলিশ। একটি সর্বভারতীয়…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ নয়া পেনশন স্কিম তুলে দিয়ে পুরোনো পেনশন স্কিম ফিরিয়ে আনার দাবিতে…
বালুরঘাট: সংস্কারের অভাবে বিপদজনকভাবে রয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। বড় বড় ফাটল ধরেছে দেওয়ালে। যেকোনও সময় বড়সড়…
শুভ দত্ত, বিন্নাগুড়ি: হাতির করিডরে শহরের আবর্জনা। বন্যপ্রাণ বিপদে পড়লেও বন দপ্তর নীরব দর্শক। মোরাঘাট…
This website uses cookies.