সুভাষ বর্মন, শালকুমারহাট: এবার শালকুমারহাটের রাভা বনবস্তি থেকে মাত্র একজন পড়ুয়া উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। বর্তমানে এই বস্তির কলেজ পড়ুয়া দুজন। আগে কেউ বিএ পাশ করেননি। কলেজে ভর্তি হলেও মাঝপথে পড়া ছেড়ে দিয়েছেন অনেকে। এখনও কেউ কোনও সরকারি চাকরি করেন না। বস্তিতে কর্মসংস্থানের বড় অভাব। পড়াশোনা ছেড়ে মাঝপথে অনেকেই পেটের টানে ভিনরাজ্যে চলে যান।
জলদাপাড়া সাউথ রেঞ্জের জঙ্গলঘেরা এই বস্তিতে ৮৫টি পরিবারের বসবাস। লোকসংখ্যা প্রায় ৫০০। কিন্তু উচ্চশিক্ষায় কারও সেরকম আগ্রহ নেই। এখন এখানকার প্রায় ৫০ জন তরুণ পরিযায়ী শ্রমিক। শিক্ষাবিদরা এটাও মনে করেন যে, চাকরি বা কর্মসংস্থানের জন্যই পড়াশোনা করতে হবে এমন ভাবনাও ঠিক নয়। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা পিছিয়ে পড়া প্রত্যন্ত টোটোপাড়ার কথাও বলেছেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা ফালাকাটা হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সুভাষ সেনগুপ্তের কথায়, ‘টোটোপাড়ায় অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও পড়াশোনা করে দু’-একজন চাকরি পেয়েছেন। তাই রাভা বস্তিতে শিক্ষিতদের মাধ্যমে সচেতনতা প্রচার করতে হবে। এজন্য সরকারি প্রচেষ্টাও প্রয়োজন।’
এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে রাকেশ্বরী রাভা। সে শিলবাড়িহাট হাইস্কুলের পড়ুয়া। পাশ করে কলেজে ভর্তি হতে চায় সে। মেয়েকে কলেজে পড়াবেন বলে জানিয়েছেন বাবা তপন রাভাও। কিন্তু অতীতের ছবিটা বলছে, পরে আর কেউ বিএ কোর্স সম্পূর্ণ করেন না। ছেলেদের ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের তাগিদে মাঝপথে কলেজে পড়া বন্ধ হয়ে যায়। আর মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। ২০১১ সালে এই বস্তির তরুণ মন্টু রাভাই প্রথম ফালাকাটা কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু পড়া ছেড়ে দেন। মন্টুর কথায়, ‘কাজের তাগিদেই কলেজের পড়া শেষ করতে পারিনি।’
তবে এখন বস্তির দেবনাথ রাভা ও মণিকা রাভা কলেজে পড়ছেন। দেবনাথ আলিপুরদুয়ার কলেজের ষষ্ঠ সিমেস্টার ও মণিকা ফালাকাটা কলেজের দ্বিতীয় সিমেস্টারের পড়ুয়া। দেবনাথের কথায়, ‘কষ্ট হলেও পড়াটা এখনও ছাড়িনি। বিএ পাশ করতে চাই।’ মণিকারও একই বক্তব্য।