নয়াদিল্লি: জি-২০ বৈঠকে সভাপতিত্ব করতে চলেছে ভারত। আগামী সেপ্টেম্বরে রাজধানী দিল্লিতে বসতে চলেছে এই সম্মেলন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, চিনা প্রিমিয়ার শি জিনপিন সহ বিশ্বের তাবড় তাবড় রাষ্ট্রনায়করা এই বৈঠকে যোগ দিতে ভারতে আসতে চলেছেন বলে খবর। এই ‘হাই প্রোফাইল’ আন্তর্জাতিক সম্মেলন ঘিরে দিল্লিজুড়ে নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অতীতে যা কখনও হয়নি, বেনজির নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে, গোটা দিল্লিকে কার্যত তিনদিন ঘরবন্দী করে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে মোদি সরকার। আর এই সিদ্ধান্ত ঘিরেই ক্ষুব্ধ দিল্লির বণিক মহলের একাংশ।
প্রসঙ্গত, জি-২০ সম্মেলনের জন্য আসন্ন ৮-৯-১০ সেপ্টেম্বর সমগ্র দিল্লির দুটি প্রাণকেন্দ্র খান মার্কেট এবং কনট প্লেসে অবস্থিত সব দোকান, রেস্তরাঁ, অফিস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। অর্থাৎ সেই তিনদিন খুলবে না কোনও দোকানপাট, হবে না কোনও প্রকার বিকিকিনি। এই নির্দেশের বিরুদ্ধেই তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, দিল্লির উপরাজ্যপাল সহ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে চিঠি লিখে নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের বক্তব্য, ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর শনি-রবিবার এমনিতেই সরকারি ছুটির দিন। সপ্তাহান্তেই এই সব স্থানে বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি হয়। তাছাড়া ৭ তারিখ জন্মাষ্টমীর ছুটি। কিন্তু এর সঙ্গে ৮ সেপ্টেম্বরও ছুটির তালিকায় তুলে দিয়েছে সরকার। ওই তিনদিন রাজধানীর সব সরকারি–বেসরকারি স্কুল, কলেজ, অফিস–কাছারি, ব্যাংক ও যাবতীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বাজার হাট বন্ধ রাখা হবে। পাশাপাশি দিল্লি বিমানবন্দর এবং রেল স্টেশন থেকে শহরে যাতায়াতের প্রতিটি রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
সহজেই অনুমেয়, কেন্দ্রীয় সরকার চায় না, সম্মেলনে হাজির হওয়া কোনও দেশ ও তাদের শীর্ষ প্রতিনিধিদের অযথা হয়রানির মুখে পড়তে হোক। কিন্তু এই নির্দেশের জেরে দিল্লির কনট প্লেস, মালচা মার্গ, খান মার্কেট, শংকর মার্কেট, সদর বাজার, জনপথ, মোহন সিং প্যালেস বা পালিকা বাজারের দিল্লির প্রধান হাট-বাজার বা দোকানপাট বন্ধ থাকায় বিপুল পরিমাণ আর্থিক লোকসানের মুখে পড়তে হবে ব্যবসায়ী মহলের একাংশকে। এর বিকল্প পন্থা খুঁজতেই প্রধানমন্ত্রী, দিল্লির উপ রাজ্যপাল এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি চিঠি পাঠিয়েছে দিল্লি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন, খান মার্কেট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন সহ একাধিক বণিক সংগঠন। যদিও জানা গিয়েছে, মধ্যদিল্লির বাইরে অধিকাংশ দোকানপাট, যথা লাজপত নগর, চাঁদনি চক বা চিত্তরঞ্জন পার্কের হাটবাজার সবই খোলা থাকবে।
এই প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দিল্লি চেম্বার অফ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারপার্সন ব্রিজেশ গোয়েল বলেন, ‘এই সরকারি ফরমান দিল্লির ব্যবসায়ীদের কাছে বজ্রাঘাতের মতো। অত্যন্ত দুঃখজনক এই নির্দেশ। ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে জি-২০ সম্মেলনের জন্য অপেক্ষা করে আছেন। এই সম্মেলনের ফলে উপকৃত হবে তারাও। কিন্তু সরকারের এই তিনদিন বাজারহাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে তারা কোটি কোটি টাকার লোকসানের মুখ দেখবে। কেন্দ্র সরকারের উচিত এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা।’