উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ অর্থনীতি ক্রমশ তলানিতে ঠেকছে পাকিস্তানের। এই চাপ সামলাতে বিশ্বব্যাংকের কাছে হাত পাতল শাহবাজ শরিফ সরকার। ওয়াশিংটনভিত্তিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান আইএমএফের আশঙ্কা, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে পাকিস্তানের দুর্বল অর্থনীতি। চলতি বছর দেশটির মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ। চলমান আর্থিক চাপের মধ্যে, পাকিস্তান আইএমএফের কাছে একটি প্যাকেজে অনুমোদনের অনুরোধ করেছে।
বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান তার প্রায় সব প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। দেশটি তার প্রাথমিক বাজেট লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে পড়বে এবং টানা ৩ বছর আন্তর্জাতিক ঘাটতিতে থাকবে। দেশটিতে দারিদ্রসীমার নিচে থাকবে ৪০ শতাংশ লোক। আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ১.৮ শতাংশে থেমে যাবে। দরিদ্র কৃষকরা কৃষি ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে লাভবান হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন। তবে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, পরিবহন, বাণিজ্য ইত্যাদি খাতের ওপর এই লভ্যাংশ নির্ভর করবে। চলতি অর্থবছরে মুদ্রাস্ফীতি ৩০ শতাংশ থাকায় পাকিস্তানে দিনমজুরদের মজুরি মাত্র ৫ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়তে থাকায় দেশটিতে স্কুলগামী শিশুদের সংখ্যা কমতে পারে বলে আশংকা করছে বিশ্ব ব্যাংক। বেশিমাত্রায় দারিদ্রতার স্বীকার হবে খাইবার পাখতুনখোয়া, সিন্ধু, বেলুচিস্তানের মতো বন্যা কবলিত এলাকাগুলো। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার প্রকোপও ২৯ থেকে ৩২ শতাংশে বৃদ্ধি পেতে পারে বলা হয়েছে। এছাড়াও পাকিস্তানের চলতি হিসাব ঘাটতি ৩.৬ বিলিয়ন ডলার থেকে ০.৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
এদিকে বছরের শুরুতে বিনিময় হারের জটিলতার কারণে দেশটির সরকারি রেমিটেন্স ৬.৮ শতাংশ কমেছে। পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মুহাম্মদ আওরঙ্গজেবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে বর্তমানে ওয়াশিংটনে রয়েছেন। তাঁরা পাকিস্তানের সর্বশেষ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। আইএমএফ প্রাথমিকভাবে ইউরোবন্ড পরিশোধ সহ চলমান অন্যান্য ঋণ পরিশোধ করার পরামর্শ দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের আরও পরামর্শ, পাকিস্তান সহ মুদ্রাস্ফীতির চাপের সম্মুখীন অন্যান্য দেশগুলিকে কঠোর আর্থিক নীতি বজায় রাখা এবং ডেটা-চালিত পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। আইএমএফ ঋণে জর্জরিত দেশটিকে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার ওপরও জোর দিয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আওরঙ্গজেব ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংককে বলেছিলেন যে, মূল সংস্কারগুলি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হলে পাকিস্তানের অর্থনীতি ২০৪৭ সালের মধ্যে ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছতে পারে। আইএমএফের সঙ্গে পাকিস্তানের বর্তমান ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ ব্যবস্থা এপ্রিলের শেষের দিকে শেষ হতে চলেছে। সেই কথা মাথায় রেখেই পাকিস্তান দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্য তদ্বির করছে। আইএমএফ অবশ্য পাকিস্তানের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য নতুন ঋণ প্যাকেজের চেয়ে অর্থনৈতিক সংস্কারকে অগ্রাধিকার দেওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে পরামর্শ দিয়েছে।