রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: কারও সকালে শিলিগুড়িতে (Siliguri) পৌঁছে ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়ে বুধবারের ট্রেনে বাংলাদেশে (Bangladesh) ফেরার কথা ছিল। কেউ আবার সকালে টয়ট্রেন ধরে ঘুরতে যেতেন দার্জিলিংয়ে। কিন্তু তাল কাটল যখন মিতালি এক্সপ্রেসের (Mitali Express) চাকা থমকে গেল বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু সেতুর কাছে। কী হয়েছে, খোঁজ করতে গিয়ে যাত্রীরা জানতে পারলেন, টাঙ্গাইলে লাইনচ্যুত হয়েছে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস (Panchagarh Express)। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ট্রেন পরিষেবা (Train Service)। মিতালিও কখন ছাড়বে, কেউ বলতে পারছেন না। সেই মিতালি এক্সপ্রেস মঙ্গলবার নির্দিষ্ট সময় থেকে প্রায় ১০ ঘণ্টা ৩০ মিনিট দেরিতে যখন নিউ জলপাইগুড়িতে (New Jalpaiguri Station) এসে থামল তখন চোখেমুখে হতাশা স্পষ্ট যাত্রীদের।
আলিপুরদুয়ার জেলার সোনাপুরের বাসিন্দা লক্ষ্মী সাহার বয়স্ক বাবা-মা ঘুরতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে। এদিন মিতালি এক্সপ্রেসে ফিরছিলেন তাঁরা। বাবা-মাকে নেওয়ার জন্য সকাল থেকেই এসে হাপিত্যেশ করে বসেছিলেন এনজেপিতে। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও ট্রেন না আসায় অনুসন্ধান কেন্দ্রে গিয়ে খোঁজ করেন। সেখান থেকে তাঁকে জানানো হয়, ট্রেন অনেকক্ষণ আগে পৌঁছে গিয়েছে। তারপর ফোনে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন, ট্রেন তখনও বাংলাদেশে। লক্ষ্মীর প্রশ্ন, ‘আন্তর্জাতিক একটি ট্রেন দেরিতে চলছে, সেটা এখানকার রেলকর্মীরাই জানেন না! ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে তো বিভ্রান্ত করার কোনও মানে নেই।’ লক্ষ্মীর বাবা বছর ৭০-এর চিত্তরঞ্জন সরকার চেকিং শেষে স্ত্রীর হাত ধরে বিধ্বস্ত অবস্থায় বেরিয়ে আসার সময় বললেন, ‘খুবই খারাপ অভিজ্ঞতা। সারাদিন না খেয়ে আছি। যাবার সময় বাসেও এত সমস্যা হয়নি, যতটা ট্রেনে হল।’
চিত্তরঞ্জনের মতোই বাকি যাত্রীরাও দিনভর ট্রেনে খাবার কিংবা পানীয় জল পাননি। আন্তর্জাতিক ট্রেন হওয়ায় নিয়মের গেরোয় অন্য স্টেশনেও খাবার, জল কিছুই মেলেনি। আর তাই দুই দেশের রেলের ভূমিকায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে-কে এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর সাফাই, ‘আমাকে একটু খোঁজ করতে হবে। এডিআরএম এনজেপি ভালো বলতে পারবেন।’ এডিআরএম এনজেপি সঞ্জয় চিলওয়ারওয়ারের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সোমবার রাত ১০টায় বাংলাদেশ থেকে ছেড়ে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে এনজেপি পৌঁছানোর কথা ছিল মিতালি এক্সপ্রেসের। কিন্তু সোমবার রাতে প্রায় দুই ঘণ্টা দেরিতে বাংলাদেশ থেকে ছাড়ে ট্রেন। এরপর বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত অন্তত আটবার দাঁড়িয়েছে ট্রেনটি। এদিন বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে এনজেপিতে এসে পৌঁছায় ট্রেনটি।
নেপালের বাসিন্দা ডাঃ রবিন পাক্কা ঢাকায় ডাক্তারি পড়ছেন। চার বন্ধু বাড়ি যাওয়ার জন্য ফিরছিলেন। তাঁর কথায়, ‘বাড়িতে আজ অনুষ্ঠান ছিল। কিন্তু যখন বাড়িতে পৌঁছাব তখব আর কিছুই দেখতে পাব না।’
স্কুলে পৌঁছাতে যাতে দেরি না হয়, তার জন্য অনেক পড়ুয়াই ইউনিফর্ম পরে ট্রেনে চেপেছিল। বিকেলে যখন তারা বাব-মায়ের হাত ধরে গুটিগুটি পায়ে স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে আসছে, তাদের চোখেও ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। মাটিগাড়ার একটি বেসরকারি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলের পড়ুয়া সৌরভ সেনের কথায়, ‘শুধু চিপস খেয়ে সারাদিন কাটিয়েছি। এভাবে কি থাকা যায়!’ অভিভাবক সুইটি সেনের গলায় হতাশা, ‘ছেলেকে স্কুলে দিতে এসেছিলাম। জরুরি বৈঠকও ছিল স্কুলে। কিন্তু যোগ দেওয়া হল না।’