গাজোলঃ বৈরগাছি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা নয় ছয় এর অভিযোগ এনে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন একলাখি, রাজা দীঘি, খোসলাবাড়ি এলাকার ৮ জন বাসিন্দা। সেই মামলাতেই ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান, এক্সিকিউটিভ এবং নির্মাণ সহায়ককে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন শাখা। গতকাল কলকাতা থেকে গাজোল থানায় আসেন দুর্নীতি দমন শাখার ১০ জন সদস্য। ডেকে পাঠানো হয় বৈরগাছি -২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান(২০১৮-২৩) সুবোধ সরকার, এক্সিকিউটিভ শোভেন রায় এবং নির্মাণ সহায়ক অপূর্ব বারুইকে। গাজোল থানায় দীর্ঘক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাদের। কিন্তু তাদের উত্তর সন্তোষজনক না হওয়ায় গতকাল রাতেই তাদের নিয়ে কলকাতা রওনা হয় দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিকরা। সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, তাদের তিনজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। দুর্নীতির অভিযোগে প্রধান সহ দুইজনের গ্রেপ্তারের ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলাকারীরা। তারা জানালেন, ওদের গ্রেপ্তারের খবরে আমরা একটু আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। এবার হয়তো দুর্নীতির সঙ্গে যুক্তরা উপযুক্ত শাস্তি পাবে।
বৈরগাছি -২ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সুবোধ সরকার সহ অন্যদের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতের কয়েকটি স্কিমে প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ আনেন এলাকার বাসিন্দা হৃষিকেশ চাকি, হেমন্ত সরকার সহ ৮ জন। তাদের অভিযোগ, কংক্রিট ঢালাই রাস্তা, বাম্বু পাইলিং, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, শ্মশানের সৌন্দর্যায়ন প্রভৃতি প্রকল্পে এই বিপুল পরিমাণ টাকা নয় ছয় করা হয়েছে। শুধুমাত্র হাঁড়িয়া কুড়ি শ্মশানের সৌন্দর্যায়নের জন্য ১ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে সামান্য কিছু পেভার ব্লক বসিয়ে কাজ শেষ করে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে কাজ হয়েছে বড়জোর ১০ লাখ টাকার। বাদবাকি সব টাকা নয়ছয় হয়েছে।
একলাখি, জিগিন, রাজাদিঘি প্রভৃতি এলাকায় ঢালাই রাস্তার কাজ না করে বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। চারটি আইসিডিএস সেন্টার এবং রাজা দিঘি প্রাইমারি স্কুল ও রাজা দিঘি জাহির থানে মাটিভরাট না করে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। বাম্বু পাইলিং এর প্রতিটি প্রকল্পের জন্য তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। অথচ কাজ করা হয়েছে দশ থেকে কুড়ি হাজার টাকার। এছাড়া আরও নানা প্রকল্পে দুর্নীতি করা হয়েছে।
মামলাকারীদের পক্ষে হেমন্ত সরকারের জানান, এই সমস্ত দুর্নীতির তদন্তের জন্য ২০২২ সালের ১৩ জুন জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক, এসডিও, ডিস্ট্রিক্ট নোডাল অফিসার এবং বিডিওর কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনিক স্তরে কোনও তদন্ত শুরু না হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করি। এরপর মামলা প্রত্যাহার করার জন্য আমাদের উপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছিলেন প্রধান সুবোধ সরকার। মামলাকারীদের মধ্যে অন্যতম হৃষিকেশ চাকির উপর আক্রমণ করা হয়। খুন হন আরও এক মামলা কারী প্রহ্লাদ সরকারের দাদা ধনঞ্জয় সরকার। তবুও মামলা থেকে সরে আসিনি আমরা। এদিন জানতে পারলাম প্রধান সুবোধ সরকার, এক্সিকিউটিভ শোভেন রায় এবং নির্মাণ সহায়ক অপূর্ব বাড়ুইকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিকরা। এই খবরে আমরা খুব খুশি। কিছুটা হলেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছি আমরা। আমরা চাই এই দুর্নীতির সাথে আরও যারা যুক্ত রয়েছে, তদন্ত করে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হোক। সব মিলিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় খুশি বৈরগাছি -২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা।