রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি, ১২ মার্চ : ফোঁসফাঁসই সার, পানিট্যাঙ্কির (panitanki) জমি কেলেঙ্কারি মোকাবিলায় প্রশাসন কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) পরিচালিত মহকুমা পরিষদ প্রথম দিকে কড়া ব্যবস্থার ইঙ্গিত দিলেও, সবকিছুই থমকে গিয়েছে। বরং ওই অবৈধ বাজারে নিয়মিত নির্মাণকাজ চলছে। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি কোথাও সমঝোতার রাস্তায় হেঁটেছে মহকুমা পরিষদ? তা না হলে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ পেয়েও কেন এই কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে গড়িমসি হচ্ছে? এই ঘটনার প্রতিবাদে এবার পানিট্যাঙ্কির ব্যবসায়ীদের একাংশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (cm mamata banerjee) দ্বারস্থ হচ্ছেন। তাঁদের বিশ্বাস, মুখ্যমন্ত্রীই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। এই সপ্তাহেই ব্যবসায়ীদের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে নবান্নে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি অরুণ ঘোষ বলেছেন, ‘পানিট্যাঙ্কির জমি আবার মাপা হচ্ছে।’
খড়িবাড়ি ব্লকের ভারত-নেপাল সীমান্তের পানিট্যাঙ্কিতে (panitanki) চা বাগানের লিজে থাকা সরকারি জমি দখল করে মার্কেট তৈরি হয়েছে। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে চা গাছ উপড়ে ফেলে জমিতে প্লটিং করে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এই বাজারে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার কারবার হয়েছে। উত্তরবঙ্গ সংবাদে ধারাবাহিকভাবে এই দুর্নীতি ফাঁস হওয়ার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছিল। এই জমি কেলেঙ্কারিতে যুক্ত মেচি মার্কেট ব্যবসায়ী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনকে তলব করা হয়। পরবর্তীতে প্রায় ১০ কোটি টাকায় ৭.৯২ একর জমি ওই ব্যবসায়ী সংগঠনকে ৩০ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়।
দেখা যায়, ওই ব্যবসায়ী সংগঠন লিজপ্রাপ্ত জমির বাইরে ১২-১৩ বিঘা অতিরিক্ত জমি দখল করে সেখানেও প্লটিং করে বিক্রি করে দিয়েছে। বাম আমলে পদক্ষেপ না করা হলেও তৃণমূলের হাতে মহকুমা পরিষদ আসার পরেই সাধারণ মানুষ পানিট্যাঙ্কির জমি কেলেঙ্কারির কিনারা হবে বলে আশা করেছিলেন। প্রথম দিকে মহকুমা পরিষদের তরফে ওই জমি পুনরুদ্ধারের তোড়জোড় করা হয়। একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে জমি মাপা হয়। সেই রিপোর্টেও লিজের বাইরে ১২ বিঘার বেশি জমি দখলের কথা লেখা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও ছ’মাস কেটে গিয়েছে। প্রশাসন এখনও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। মহকুমা পরিষদের ভূমি কর্মাধ্যক্ষ কিশোরীমোহন সিংহ প্রথম দিকে কড়া মনোভাব দেখালেও বর্তমানে কার্যত নীরব।
প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কি প্রশাসন জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইছে? নাকি তলে তলে কোনও সেটিং হয়ে গিয়েছে? এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এবার পানিট্যাঙ্কির ব্যবসায়ীরা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে সরকারি জমি পুনরুদ্ধার করার পাশাপাশি এই কারবারে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলছেন।