প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ‘সংসদ টিভি’কে অনৈতিকভাবে কেন্দ্রীয় সরকারি কৃতিত্ব এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন নানাবিধ সরকারি প্রকল্পের হিসেবনিকেশের মাধ্যমরূপে ব্যবহার করার বেনজির অভিযোগ উঠল মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার লোকসভায় মণিপুর ইস্যুতে বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের তরফে প্রস্তাবিত অনাস্থা প্রস্তাব বিষয়ক আলোচনা চলাকালীন এই বিতর্কিত বিষয়টি নিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মায়াবতীর বহুজন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ দানিশ আলি।
এদিন লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈর বক্তব্যের পর যখন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে তাঁর বক্তব্য রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ঠিক তখনই সংসদ টিভির এই বিতর্কিত অবস্থান নিয়ে সরাসরি লোকসভা অধ্যক্ষ ওম বিড়লার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সভাকক্ষে চেঁচামেচি জুড়ে দেন দানিশ আলি। সবাই অবাক হয়ে দেখেন, ‘সংসদ টিভি’র লাইভ সম্প্রচার চলাকালীন টিভির নীচে ‘স্ক্রোলে’ দেখানো হচ্ছে কেন্দ্রীয় মোদি সরকারের তরফে অর্জিত বিভিন্ন কৃতিত্ব, সম্মান এবং সরকারি মন্ত্রণালয়ের নানাবিধ পারফরম্যান্সের রিপোর্ট কার্ড। লোকসভা অধ্যক্ষ ওম বিড়লার নেতৃত্বাধীন লোকসভা সচিবালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সংসদের কর্মকান্ড দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরার একমাত্র প্রচার মাধ্যমে লোকসভায় চলমান অনাস্থা প্রস্তাব সংক্রান্ত আলোচনার তত্ত্বতালাশ প্রদর্শন না করে, বিরোধী শিবিরের তরফে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে চর্চা শুরু করারসময়ই এই পদক্ষেপ চূড়ান্ত ‘অসাংবিধাবিক’ এবং ‘অনৈতিক’ বলে প্রবল হইহল্লা জুড়ে দেন বিরোধী জোট সাংসদরা।
কংগ্রেসের লোকসভা দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী, তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়, মহুয়া মৈত্র, ডিএমকে নেতা টি আর বালু, দয়ানিধি মারাণ সহ একাধিক বর্ষীয়ান বিরোধী নেতারা ‘ওয়েলে’ নেমে প্রবল হইহট্টগোল জুড়ে দেন। ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে পড়েন খোদ স্পিকার। তিনি বিরোধীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘টিভিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আমার হাতে নেই। আমি ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি এই সম্প্রসারণ বন্ধ করার জন্য। আপনারা দয়া করে সহযোগিতা করুন, আলোচনা শুরু করুন।’ কিন্তু ওম বিড়লার কথায় আশ্বস্ত হননি বিরোধী জোট সদস্যরা। প্রবল বিরোধী বিশৃঙ্খলার জেরে প্রায় ১৫ মিনিট বন্ধ থাকে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা, পরে বিতর্কিত পর্বটি ‘সরিয়ে ফেলা’ হলে আবারও আলোচনা শুরু হয়।
‘সংসদ টিভি’র প্রসারণে কেন্দ্রীয় সরকারি প্রচার ‘অভাবনীয়’ এবং ‘নিম্নমানের রাজনৈতিক অভিসন্ধি’ বলে দাবি করেন আরএসপি সাংসদ এন কে প্রেমচন্দ্রণ। তিনি বলেন, ‘একসময়ে বর্ষীয়ান বাম নেতা এবং প্রাক্তন লোকসভা অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সংসদীয় কার্যাবলী দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরতে চালু করা হয় লোকসভা টিভি, পরবর্তীতে যা ‘সংসদ টিভি’ নামে পরিচিত। সংসদ টিভিকে রাজনৈতিক গুণগান বিশেষ করে সরকারের ঢাক পেটানোর এই নয়া কৌশলে মুখ পুড়ল সংসদ টিভির সঙ্গে জড়িত দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য এবং পরম্পরার৷ সোমনাথদা বেঁচে থাকলে এই নিয়ে নিশ্চয়ই তিরস্কার করতেন শাসক শিবিরকে।’