প্রণব সূত্রধর,আলিপুরদুয়ার: সরকারি হিসেব অনুযায়ী যে টাকা নেওয়ার কথা, কোথাও তার চারগুণ, কোথাও বা পাঁচগুণ অবধি টাকা নেওয়া হচ্ছে ভর্তির সময়। আলিপুরদুয়ার শহরের একাধিক সরকারি স্কুলের বিরুদ্ধে সরকারি নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এভাবেই অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি সেই বাড়তি টাকার কোনও রসিদও দেওয়া হচ্ছে না।বড়জোর ৪০০ বা ৪৫০ টাকার রসিদ দেওয়া হচ্ছে। অথচ স্কুলগুলির কর্তৃপক্ষ ভর্তির সময় কোনওটি নিচ্ছে ৭০০, কোনওটি আবার ১০০০ বা ১৭০০ টাকা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে অভিভাবক মহলে।
সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী ২৪০ টাকা ভর্তির ফি।কিন্তু স্কুলগুলির কর্তৃপক্ষের দাবি, সরকারিভাবে নির্দিষ্ট করা সেই ফি নিলে স্কুলের বৈদ্যুতিক বিল, সাফাইয়ের কাজ, পরীক্ষা পরিচালনা, সরস্বতীপুজো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, পার্ট-টাইম শিক্ষক রাখা, এসব কোনওকিছুই সম্ভব হবে না। তাই এই বাড়তি টাকার বোঝা। স্কুলগুলির দাবি, তারা এই বাড়তি ফি নির্ধারণ করেছে অভিভাবকদের সম্মতি নিয়েই।
এদিকে, কোনও অভিভাবকই সন্তানের ক্ষতির ভয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চাইছেন না। শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এক অভিভাবকের কথায়, ‘ভর্তির সময়ে এতগুলো টাকা দেওয়া আমার মতো অনেক বাবা-মায়ের পক্ষেই সম্ভব নয়।’ ক্ষোভ যে রয়েছে, সেকথা মেনে নিয়ে বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) আশানুল করিম বলেন, ‘তদন্ত করেছিলাম। নানা স্কুলের নানা সমস্যা থাকে৷ কারও ক্ষেত্রে ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করার মতো বিষয় থাকে। সেজন্য হয়তো অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে।’ তবে শিক্ষাকর্তার মতে, বাড়তি টাকা নিতে গেলে ফিন্যান্স সাব-কমিটি ও ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন নিতে হবে এবং অবশ্যই পাকা রসিদ দিতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। নিখিল ভারতীয় শিক্ষক সমিতির সম্পাদক জয়ন্ত সাহা বলেন, ‘কয়েকটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির মাথায় শাসকদের স্থানীয় নেতারা রয়েছেন। তাঁরাই এসব নিয়ন্ত্রণ করছেন।’
তবে গ্রামীণ এলাকায় ভর্তির ফি’র অঙ্ক ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যেই থাকছে। সেটাও বেশি ঠিকই, কিন্তু শহরের স্কুলগুলির মতো অতটাও বেশি নয় বলে গ্রামে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভটা একটু কম। শহর এলাকার স্কুলগুলির তুলনায় গ্রামীণ এলাকার স্কুলগুলিতে সমস্যা বেশি থাকা সত্ত্বেও টাকার অঙ্ক কম বলে জানালেন অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস সংগঠনের জেলা সভাপতি মানস ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ভর্তির ফি নিলে বেশিরভাগ স্কুলে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে না।’
স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অতিরিক্ত টাকা নাকি নেওয়া হচ্ছে স্কুলের খরচের কথা ভেবেই। অনেক স্কুলেই সব বিষয়ের পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বিষয়ের পার্ট-টাইম শিক্ষক নিতে গেলে বেতন দিতে অতিরিক্ত টাকার প্রয়োজন। কোথাও স্কুলে দারোয়ান রাখতে বাড়তি টাকা লাগছে। কোথাও আবার উন্নয়নমূলক কাজের জন্য এই টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।