বালুরঘাট: চুরি যাচ্ছে সরকারি সম্পত্তি। বাড়ি বাড়ি ল্যান্ডলাইনের কানেকশন দেওয়ার জন্য শহরের বিভিন্ন জায়গায় বসানো পোল থেকে আস্ত তার কেটে নিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। কারণ এই মোটা তারের ভেতরেই রয়েছে দামি তামার তার। বিভিন্ন এলাকা থেকে বাড়ির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর আসছে দপ্তরে। পুলিশ থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বধন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও সুরাহা মিলছে না। বর্তমানে এই দুষ্কৃতীদের উপদ্রবে দিশেহারা অবস্থা বিএসএনএল কর্মী ও আধিকারিকদের।
তখন মোবাইল আসেনি। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ল্যান্ডলাইন। ফোন আসার অপেক্ষায় বাড়ির সদস্যরা মুখিয়ে থাকত ল্যান্ডফোনের দিকে। কেন্দ্র সরকারের ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেডের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল এই নতুন যুগ। বাড়িতে কানেকশন নিতে দীর্ঘ লাইন পড়তো অফিসে। এখন যুগ বদলেছে। ল্যান্ডলাইনের পরিবর্তে সকলের হাতের মুঠোয় এসেছে মোবাইল। কিন্তু মাত্র কয়েক দশক আগেই বসানো বিএসএনএলের পোলগুলো দিব্যি রয়ে গিয়েছে। পোলের মাথায় জয়েন্ট বক্স, তার সঙ্গেই বাড়িতে পরিষেবা পৌঁছে দিতে রয়েছে মোটা কেবল। অনেকের বাড়িতে ল্যান্ডলাইন উঠিয়ে দিলেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সুবিধা নেন এই কেবলের মাধ্যমে। এই কেবল বা তারেই নজর পড়েছে দুষ্কৃতীদের। রাতের অন্ধকারে সকলের অলক্ষে পাঁচ থেকে ছয় ফিট লম্বা তারগুলো চোখের নিমিষেই গায়েব হয়ে যাচ্ছে। চুরির কারণ ভেতরের তামার তার। টেলিকম দপ্তর নজরে বিষয়টি নেই, এমনটা নয়। কিন্তু তাদের হাতে করার কিছু নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে। পুলিশের কাছেও অভিযোগ জমা পড়েছে। কিন্তু চোরের কিনারা পাওয়া যাচ্ছে না। অগত্যা বারংবার তার বদলে দিয়েই আবার যোগাযোগ স্থাপন করা হচ্ছে। এভাবে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হওয়ার জন্য আক্ষেপ প্রকাশ করছেন টেলিকম দপ্তরের আধিকারিক থেকে শুরু করে কর্মী ও গ্রাহকরা। বালুরঘাটের চকভৃগু, সংকেতপাড়া, উত্তরায়ণ, কলেজপাড়া, ডাকবাংলো এলাকায় এখন এই তার চুরিতে সন্ত্রস্ত দপ্তর।
লোকাল কেবল অপারেটর তথা টেলিকম ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোভাইডার সুরজিৎ দাস বলেন, ‘চার পাঁচ দিন আগে চকভৃগুর একটি এলাকা থেকে বাড়ির ল্যান্ডলাইন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার অভিযোগ জমা পড়ে। এলাকায় পৌঁছে দেখি বিএসএনএল পোল থেকে পুরো তারটি উধাও। এখন অনেক জায়গায় ফাইবার কেবল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক জায়গাতেই তামার কেবল রয়ে গিয়েছে। দুষ্কৃতীরা এই কেবেলগুলোরই ক্ষতি করছে। পরিষেবা দিতে নাজেহাল অবস্থা হচ্ছে।’
বালুরঘাটের জুনিয়র টেলিকম আধিকারিক সৌম্যকান্তি পাল বলেন, ‘এভাবে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হতে দেখে খারাপ লাগছে। আমরা থানায় অভিযোগ জানিয়ে ঊর্ধ্বধন কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি। তবুও তার চুরি যাচ্ছে আটকানো যাচ্ছে না। আমাদের করার কিছুই নেই। কখন দুষ্কৃতীরা এই কাণ্ড ঘটাচ্ছে জানা যাচ্ছে না। হয়ে সেখানে নতুন তার লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
সংকেত পাড়া এলাকার গ্রাহক সুব্রত নাগ বলেন, ‘দুদিন আগেই বাড়িতে বিএসএনএলের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। টেলিকম দপ্তরে অভিযোগ জানাই। তারা এসে বলেন পোল থেকে তার চুরি হয়েছে। তারা আবার তার লাগিয়ে দিয়েছে। এক সময়কার জনপ্রিয় বিএসএনএল এর করুণ অবস্থা সত্যিই দুঃখজনক।’