প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: শনিবার রীতিমতো রণক্ষেত্রের আকার নিল নয়াদিল্লিতে সিপিএমের প্রশাসনিক কার্যালয় হরকিষণ সিং সুরজিত ভবন। দিল্লিতে কেন্দ্রের জি-২০ সম্মেলনের আগে দেশের আমজনতার অপ্রাপ্তি, বঞ্চনা, ক্ষোভ, দাবি দাওয়া ইত্যাদি নিয়ে আলোচনার জন্য সুরজিত ভবনে ‘উই-২০’ শীর্ষক বিশেষ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল সমমনোভাবাপন্ন বাম বিদ্বজ্জন সমাজ৷ শনিবার হরকিষণ সিং সুরজিত ভবনে আয়োজিত সেই সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করল দিল্লি পুলিশ যা নিয়ে রীতিমতো উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি। এই অনুষ্ঠানে যোগদান করতে বাধা দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষকে, বন্ধ করে দেওয়া হয় ভবনের প্রধান দ্বার, দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে এহেন অভিযোগে সোচ্চার হয়েছেন আয়োজকরা৷ একইসুরে গলা মিলিয়েছেন প্রবীণ কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ, প্রাক্তন বাম সাংসদ হান্নান মোল্লা সহ অনেকেই৷
শনিবার আয়োজকদের প্রতিনিধি জো আথিয়ালি বলেন, ‘শুক্রবার আমাদের উই-২০ সম্মেলনের উদ্বোধন হয়েছে। চলবে রবিবার পর্যন্ত। এখানে অংশ নিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত কয়েকশো মানুষ৷ গতকালও এই অনুষ্ঠান চলে শান্তিপূর্ণ ভাবে৷ কিন্তু শনিবার সকালে হঠাত্ই দেখা যায় যে হরকিষেণ সিং সুরজিত্ ভবনের মূল প্রবেশ দ্বার আটকে দিয়েছে দিল্লি পুলিশ৷ তাদের অভিযোগ, এই অনুষ্ঠানের জন্য কোনও পুলিশি অনুমতি নেওয়া হয়নি৷ যেহেতু অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হচ্ছে একটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব ভবনের প্রেক্ষাগৃহে, সেহেতু আলাদা করে অনুমতির প্রয়োজন কি? এই প্রশ্ন তোলার পরেও অনড় ছিলেন দিল্লি পুলিশ আধিকারিকরা৷ তাদের সঙ্গে বাদানুবাদ চরমে ওঠে৷’ দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রবীণ কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ বলেন, ‘এটা নতুন ভারতের গণতন্ত্র, যেখানে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ভাবে আয়োজিত একটি আলোচনাচক্রে অংশ নিতে বাধা দিচ্ছে দিল্লি পুলিশ৷’ দিল্লি পুলিশের আচরণের তীব্র নিন্দা করেন সমাজকর্মী মেধা পাটেকর৷ তাঁর প্রশ্ন, ‘সরকারের এত ভয় কিসের? বন্ধ প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে আয়োজিত হওয়া আলোচনাসভা নিয়েও তাদের এত আপত্তি কেন?’ বর্ষীয়ান বাম নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, ‘দিল্লি পুলিশের এই আচরণ নিন্দনীয় ও লজ্জাজনক। সাধারণ মানুষের আলোচনাতেও এত ভীত এই সরকার? প্রধানমন্ত্রী সংসদে মুখ খুলতে ভয় পান, অথচ গঠনমূলক আলোচনা বন্ধ করতে পুলিশ পাঠান। এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে?’
স্বাভাবিকভাবেই, দিল্লি পুলিশের অতি সক্রিয়তায় ক্ষুব্ধ সম্মেলনের আয়োজকরা৷ কিন্তু হঠাৎ কেন দিল্লি পুলিশের এহেন অতি সক্রিয়তা? বিশ্লেষকদের মতে, আর কয়েক দিনের মধ্যেই দিল্লিতে আয়োজিত হবে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন৷ তার আগে দিল্লির সৌন্দর্য রক্ষায় কোনও ভিখিরি, ভবঘুরে, ক্ষুধার্ত, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে আর্থিক সাহায্য চাওয়া রূপান্তরকামীদের মুখ যাতে প্রকাশ্য দিবালোকে চোখে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে মরীয়া কেন্দ্র সরকার৷ ইতিমধ্যেই ভিনদেশি অভ্যাগতদের সামনে দিল্লিকে সাজিয়ে তোলার চেষ্টার ত্রুটি নেই৷ একইরকম ভাবে নজর রাখা হচ্ছে প্রতিবাদী কন্ঠগুলির দিকেও৷ মোদী সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা যাতে বিদেশি অতিথি অভ্যাগতদের কানে না যায় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি প্রশাসনের৷ এই আবহেই রাজধানীর বুকে শুক্র-শনি ও রবি তিন দিন ধরে ‘উই-২০’ শীর্ষক একটি প্রতিবাদী আলোচনা চক্রের আয়োজন করা হয়েছিল৷
দেশের বিভিন্ন প্রান্তের তথাকথিত মোদী বিরোধী বিশিষ্ট বিদ্দ্বজন ও সমাজকর্মী এক মঞ্চে মিলিত হয়ে তাদের মনের কথা তুলে ধরবেন, এই ছিল সম্মেলনের আয়োজক বামপন্থী মনোভাবাপন্ন বিদ্দ্বজন সমাজের ইচ্ছে৷ এই ইচ্ছেতেও বাধ সেধেছে কেন্দ্রীয় সরকার, রাতারাতি পুলিশ পাঠিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় দরজা, আটকে দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষকে। অভিযোগ, সরকারের শীর্ষ স্তরের নির্দেশে শনিবার সকালে রাজধানীর হরকিষেণ সিং সুরজিত ভবনে আয়োজিত এই সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে অতিথি, অভ্যাগতদের প্রবেশে বাধা দিয়েছে দিল্লি পুলিশ৷ সিপিএম-র নিয়ন্ত্রণাধীন হরকিষেণ সিং সুরজিত ভবনের ভিতরে আয়োজিত আলোচনাচক্রে কিভাবে হস্তক্ষেপ করে দিল্লি পুলিশ, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রবীণ কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ, বিশিষ্ট সমাজসেবী হর্ষ মন্দার, মেধা পাটেকর, তিস্তা সেতলবাদ, প্রাক্তন বাম সাংসদ হান্নান মোল্লা সহ অনেকেই৷