বাজারে ঢোকার মুখে তার গা-ঘেঁষে গিয়েছে সরু ঘিঞ্জি গলি। গলিতে ঢুকতেই সার সার দোকান। দোকান পেরিয়ে অনেক ছোট ছোট ঘর।
এখানে কারও ভোর হয়, অপরিচিতের সঙ্গে একই ঘরে অনিচ্ছুক স্পর্শ শরীরে নিয়ে, কারও বাড়িতে ছেড়ে আসা ছোট্ট মেয়েটির জন্য চোখের জলে বালিশ ভিজিয়ে, কারও ভোর হয় বাইরে রাত কাটিয়ে লাল চোখে, কেউ পরিবার নিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে-জাপটিয়ে কাটান রাত যাঁরা সকালটুকু বরাদ্দ রেখেছেন কাজের জন্য।
পঁচিশে বৈশাখ। পিচ রাস্তাজুড়ে চলেছে কত কত ছেলেমেয়ে। কেউ নাচছে, গাইছে, কেউ কবিতা বলছে। হেঁটে চলেছেন কত মানুষ, কেউ কেউ ট্রাকে বসে রবি ঠাকুরের ছবি নিয়ে গুছিয়ে বসেছেন। গাইছেন, আবৃত্তি করছেন। তাঁদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যে ছবি, গলায় দুলছে মালা কিন্তু শুধুই কি ওই ছবিতেই আটকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর? না। যদিও শিশুদের তার সঙ্গে পরিচয় বইতে, কিছু গানে, কবিতায়। একটু একটু করে যখন বুঝতে শেখা, জানতে শেখা, অনুভব করতে শেখা তখন বুকের ওঠানামায় জড়িয়ে যান রবীন্দ্রনাথ। শরৎ মেঘে তিনি, আলোতে, আঁধারে, বাতাসে তিনি, চুন খসা দেওয়াল জুড়েও তিনিই।
কিন্তু ওঁরা? যাঁদের নিষিদ্ধপল্লিতে বাস? তাঁদের জীবনে কি রবীন্দ্রনাথ নেই? তাঁদের রোদন, বেদন, উচ্ছ্বাস, পাওয়া, না-পাওয়ার গল্পে কোথাও কি নেই তিনি? তাঁরা জানেনও না তাঁদের ফেলে আসা জীবনের সঙ্গে কত গল্প, উপন্যাস, নাটকের চরিত্রের হুবহু মিল রয়েছে। তাঁরা জানলেন না, চিনলেন না, আশা, নিরুপমা, বিনোদিনী, মৃণাল, অনামিকাদের। যে নিষিদ্ধপল্লিতে শুধুই নিষিদ্ধ জিনিসের উদোম উল্লাস, সেখানে রবীন্দ্রনাথের বাল্মীকিপ্রতিভার বাল্মীকি বেশে যে ছবি, তা বুকে নিয়ে গিয়েছিলাম ওদের পাড়ায় ২৫ শে’র ভোরে।
‘ওঁকে চেনো তোমরা?’
‘চিনি। রবি ঠাকুর। মাধ্যমিকে ফেল করলাম। কিন্তু দশ ক্লাস অবধি পড়েছি তো।’
‘মনে আছে কোনও কবিতা, গান?’ এসব কথা বলতেই মায়েরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের (যাঁরা তাঁদের পরিবার নিয়ে থাকেন) ডেকে আনলেন।
‘আজ রবি ঠাকুরের হ্যাপি বার্থ-ডে রে, কবিতা শোনা। ভুললে চড়াব বলে দিচ্ছি, টুম্পা তুই নাচ করবি। জলদি সেজে আয়।’ দোলন বলেছিলেন ধমকের সুরে।
ছবি সাজানো হল, প্রদীপ, ধূপ ওরাই এনে দিল। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মায়েরাও ফুল দিলেন ওঁর পায়ে। শুরু করল ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে…।’ সবাই গলা মেলালেন নিজের মতো করে। দু’তিনজন মেয়ে এসে এ-ওর কানে ফিশফিশিয়ে কিছু বলে গেল। তাঁরা নড়লেন না। বললেন, ‘আজ প্রথম আমাদের পাড়ায় রবি ঠাকুর এলেন যে, আজ কাম ধান্দা সব পড়ে। চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে, নিয়ো না, নিয়ো না সরায়ে- এ সিনেমার গান নয় রে রবি ঠাকুরের গান। কেউ বলেইনি এতদিন। এ গান তো আমি জানি।’ তাঁর গলায় আকুতি ঝরে পড়ছিল। তাঁরা কী গাইছেন তা কি জানেন? নাই বা জানলেন সে গানের অর্থ। তাই বলে তো তাঁর গেয়ে ওঠা মিথ্যে নয়, মিথ্যে নয় তাঁর গান। এখানেই তো তিনি রবীন্দ্রনাথ।
(লেখক শিক্ষক। জলপাইগুড়ির বাসিন্দা)
শিলিগুড়ি: পুলিশের নাকের ডগায় বসেছে জুয়ার আসর। শিলিগুড়ির(Siliguri) এয়ারভিউ মোড় সংলগ্ন মহানন্দা সেতুর(Mahananda Bridge) নীচেই…
রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: বৃষ্টি নিয়ে দোলাচলে শিলিগুড়ি (Siliguri) পুরনিগমের দুই দপ্তর। জল সংকটের মাঝে বৃষ্টিতে…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: সিঙ্গাপুরে (Singapore) নতুন করে থাবা বসাল করোনা ভাইরাস (COVID-19)। করোনার নতুন…
ময়নাগুড়ি: দেখতে দেখতে তিন মাসের বেশি সময় হয়ে গেল। রামশাই (Ramsai) মেদলা ক্যাম্পের জঙ্গলে সেভাবে…
কার্তিক দাস, খড়িবাড়ি: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছিলেন অধিকারীর বারাসতভিটার সুস্বাস্থ্যকেন্দ্র…
This website uses cookies.