- প্রতীক
কেপটাউনে বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকা ৫৫ রানে অল আউট হল সকালে, বিকেলে ভারতের আধ ডজন উইকেট পড়ে গেল কোনও রান না করেই। বৃহস্পতিবার বাদ দিয়ে শুক্রবারেই সিডনিতে এক ডজন উইকেট পড়ে গেল ৭৮ রানে। প্রথমে অস্ট্রেলিয়ার পাঁচটা উইকেট পড়ল দশ রানে, তারপর পাকিস্তানের সাতজন আউট ৬৮ রানে। কেপটাউন টেস্ট বৃহস্পতিবারেই চুকে গেল, টেস্ট ক্রিকেটের প্রায় দেড়শো বছরের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম ম্যাচ। সিডনি টেস্টও পাঁচদিন গড়াল না, শনিবারেই শেষ। গত কয়েক বছরে বহু ম্যাচ পাঁচদিন গড়ায়নি। মোটেই তার সবক’টা অতি দ্রুত বা একেবারে ধুলো ওড়া পিচে খেলা হয়নি। ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ড টেস্ট ক্রিকেটকে পাঁচদিনের বদলে চারদিনের খেলা করে দিতে পারলে খুশি হয়। গতবছর জুনে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটা চারদিনের টেস্ট খেলেও ফেলেছে।
মোদ্দা কথা, পাঁচদিনের ক্রিকেট আর পোষাচ্ছে না। কর্তাদের পোষাচ্ছে না কারণ এখনকার ক্রিকেটকর্তারা খেলা বেচে টাকা করতে চান না। টাকা করার জন্য খেলাতে চান। আর টাকা আসে টি টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ থেকে। তাই ক্রিকেটারদের ক্লান্তি, চোট-আঘাত ইত্যাদির তোয়াক্কা না করে দেদার টি টোয়েন্টি লিগ চালু হচ্ছে। চুলোয় যাক একদিনের ক্রিকেট, টেস্ট ক্রিকেট। ক্রিকেটাররাই বা ঘণ্টা পাঁচেক খেলে কোটিপতি হওয়া গেলে পাঁচদিনের রগড়ানি সহ্য করতে যাবেন কেন?
অনেকেই তাই নানা কারণে একদিনের ক্রিকেট, পাঁচদিনের ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছেন। বাকিদেরও টেস্ট খেলার প্রয়োজনীয় গুণগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। বোলাররা পিচের একটা জায়গায় ওভারের পর ওভার বল ফেলতে গলদ্ঘর্ম, কয়েক ওভার উইকেট না পড়লেই অধিনায়করাও অধৈর্য হয়ে বোলিং পরিবর্তন করেন। আরও শোচনীয় অবস্থা ব্যাটারদের। সারাক্ষণ মাথায় স্ট্রাইক রেটের পোকা নড়ে। বোলার যখন দারুণ বোলিং করছে, তখন কয়েকটা ওভার মেডেন দেওয়ার ধৈর্য নেই, বল ছাড়তে ভুলে যাচ্ছেন। কারণ চার, ছয় মারতে না পারলে মনে হয় ব্যাটিং বৃথা। সুইং, বাউন্স, স্পিন ইত্যাদির বিচার না করে ব্যাট চলে যায় বলের পানে। ফলে ১৫৩/৪ থেকে ১৫৩ রানেই অল আউট হয়ে যেতে পারে একটা দল।
মহাতারকারা সব গুণের অতীত। তাই নিজেদের ত্রুটি স্বীকার না করে সব ব্যাটাকে ছেড়ে বেঁড়ে ব্যাটাকে, অর্থাৎ পিচকে, ধরা হয়। ভারত অধিনায়ক জাঁক করে বলতে পারেন, এরকম পিচ হলে কিন্তু আমাদের দেশের পিচ নিয়েও অভিযোগ চলবে না।
অবশ্য এজন্য শুধু ক্রিকেটারদের সমালোচনা করা অনুচিত। ঠান্ডা মাথায় গলদ বিচার করে শুধরে নেওয়ার ধৈর্য কারই বা আছে আজকাল? বিচারক কথায় কথায় চাকরি থেকে বরখাস্তের আদেশ দেন, শিক্ষক পাঠ্যবই পড়ানোর রাস্তায় না গিয়ে সহায়িকার সন্ধান দিয়ে দেন, সাংবাদিক সত্যাসত্য বিচার না করে হোয়াটসঅ্যাপে ফরওয়ার্ড হওয়া বার্তাকেই খবর বলে চালিয়ে দেন, লেখকের কবিতা বা গল্প কি উপন্যাস লিখে কাটাছেঁড়া করে তাকে আরও ভালো করার ধৈর্য নেই। সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে পোস্ট করে লাইক পাওয়া চাই, তারপর আগামী বইমেলাতেই বই আকারে প্রকাশ করা চাই। জীবনানন্দ দাশ যেমন লিখেছেন আর কি ‘সকলকে ফাঁকি দিয়ে স্বর্গে পৌঁছুবে/সকলের আগে সকলেই তাই।’
(লেখক সাংবাদিক)
