প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: গোরু পাচারকাণ্ডে ‘মাস্টার মাইন্ড’-এর ভূমিকায় এই মুহূর্তে দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। গোরু পাচারের রেশ ফুরোতে না ফুরোতে এবার রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতেও উঠে এল ‘কেষ্ট’র সক্রিয় ভূমিকার সম্ভাবনা, এদিন এমনই চাঞ্চল্যকর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সূত্রে৷ রাজ্যের দু-দু’টি হাইপ্রোফাইল দুর্নীতিকাণ্ডে কীভাবে জড়িয়ে পড়লেন কেষ্ট, সে নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।
গোরু পাচারের পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে অনুব্রত’র ভূমিকা খতিয়ে দেখার উদ্দেশ্যে এবার তিহাড় জেলে বন্দি বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতির বয়ান রেকর্ড করতে চায় ইডি৷ পিএমএলএ (প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট) আইনের ৫০ ধারার অধীনে ফের অনুব্রত’র বয়ান রেকর্ড করার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইতিমধ্যেই রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে আবেদন করেছে৷ ২০ জুলাই হবে সেই আবেদনের শুনানি৷ সেদিনই সিবিআইয়ের বিশেষ বিচারক রঘুবীর সিং সিদ্ধান্ত নেবেন তিহাড় বন্দি অনুব্রত মণ্ডলের বয়ান রেকর্ড করার জন্য ইডিকে অনুমতি দেওয়া হবে কিনা৷
এই প্রসঙ্গে আইনজীবী এবং ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত, আর্থিক দুর্নীতির তদন্তে পিএমএলএ’র ৫০ ধারায় তিহাড় জেলে বন্দি অনুব্রতর বয়ান রেকর্ড করার ক্ষেত্রে ইডির আদালতের সবুজ সঙ্কেত পেতে অসুবিধা হবে না৷ ইডি সূত্রে দাবি, আদালতের অনুমতি পেলে তিহাড় জেলেই অনুব্রতর বয়ান রেকর্ড করা হতে পারে, যেখানে উপস্থিত থাকতে পারেন রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইডি আধিকারিকরা৷
প্রসঙ্গত, রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের তদন্তে ইতিমধ্যেই প্রভাবশালী যোগ মিলেছে যেখানে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, প্রাথমিক শিক্ষক পর্ষদের প্রধান মানিক ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে আরও বেশ কয়েকজন ‘মিডলম্যান’কে গ্রেপ্তার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা৷ দিন কয়েক আগে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করার সময় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি, ইডির আইনজীবী অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল (এএসজি) এস ভি রাজু দাবি করেন প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে তারা ৩৫০ কোটি টাকা বেআইনি লেনদেনের হদিস পেয়েছেন৷ এই প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে তাদের হাতে এমন কিছু তথ্য প্রমাণ এসেছে যার সূত্রে তারা এবার তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জেরা করতে চাইছেন বলেও শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে দাবি জানান এস ভি রাজু৷
প্রত্যাশিতভাবেই এই আবহে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে অনুব্রত মণ্ডল সম্পর্কে ইডির অবস্থান, এমনটাই মনে করছে দিল্লির আইনজীবী মহল৷ শুধু অনুব্রত একা নন, তার মেয়ে সুকন্যাও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। পেশায় স্কুলশিক্ষিকা সুকন্যা কীভাবে এবং ঠিক কোন যোগ্যতায় স্কুলে নিয়োগ হলেন? এর পেছনে কী রয়েছে কোনও প্রভাবশালী তত্ত্ব? বিপুল সম্পত্তির মালকিন সুকন্যাও কী বাবার ‘অনুগ্রহে’ চাকরি পেয়েছিলেন? এমন অসংখ্য প্রশ্ন উঠে এসেছে ইডির তদন্তে। তবে সুকন্যার বদলে আগে তার বাবা অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়েই এই মামলায় মনোনিবেশ করতে চাইছেন ইডির শীর্ষ আধিকারিকরা।
গোরু পাচারকাণ্ডের তদন্তে সিবিআই-র হাতে গ্রেপ্তার অনুব্রত মণ্ডলকে আসানসোল জেলে পুনরায় গ্রেপ্তার করে দিল্লিতে নিয়ে এসেছিল ইডি৷ দু’দফায় ইডি হেপাজতে রেখে তাঁর বয়ান রেকর্ড করা হয়৷ এরপর আবার নতুন করে তাঁর বয়ান রেকর্ডের জন্য ইডির দায়ের করা আবেদনের মধ্যেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য, মনে করছেন রাজ্য ও রাজধানীর আইনজীবী মহলের একাংশ৷