দেবদর্শন চন্দ, কোচবিহার : যাঁরা বিজ্ঞানের নানা খোঁজখবর রাখেন, ‘সার্ন’ শব্দটি তাঁদের কাছে খুবই পরিচিত। ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ (সংক্ষেপে সার্ন) নামে জেনেভার এই সংস্থাটি পার্টিকল ফিজিক্স নিয়ে নিরন্তর গবেষণা করে চলেছে। এই সংস্থারই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক প্রোজেক্ট হল ‘এ লার্জ আয়ন কোলাইডার এক্সপেরিমেন্ট (সংক্ষেপে অ্যালিস)’। পৃথিবীর সৃষ্টিরহস্য জানার লক্ষ্যে দেশ-বিদেশের তাবড় বিজ্ঞানীরা অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ এই প্রোজেক্টে যুক্ত। এবারে এতে উত্তরবঙ্গও জুড়ে গেল।
অ্যালিস-ইন্ডিয়া গ্রুপের সহযোগী সদস্য হিসেবে কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের (পিবিইউ) পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ডঃ প্রবীরকুমার হালদারকে বেছে নেওয়া হয়েছে। একদিকে প্রবীর নিজে যেমন এই প্রোজেক্টের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, অন্যদিকে তাঁর অধীনে থাকা গবেষকরা এবার থেকে সার্নে গিয়ে গবেষণার সুযোগ পাবেন। বিশ্বপ্রসিদ্ধ এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ মেলাটা উত্তরবঙ্গের সামনে একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন বলেই মনে করা হচ্ছে। খবর ছড়াতেই গোটা উত্তরবঙ্গে খুশির হাওয়া। উচ্ছ্বসিত প্রবীরও, ‘আশা করছি, পৃথিবীর সৃষ্টিরহস্য সন্ধানে সার্নের সঙ্গে যে ভারতীয় দলগুলি যুক্ত, তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পিবিইউ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’ পিবিইউয়ের রেজিস্ট্রার ডঃ আব্দুল কাদের সাফেলি বললেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের হাতেগোনা দু’একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরাই অ্যালিস-ইন্ডিয়া গ্রুপের সহযোগী সদস্য হতে পেরেছে। এবারে আমরাও এতে জুড়ে গেলাম। এর ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম আরও বাড়বে।’
পদার্থবিদ্যা নিয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি প্রবীর প্রতিনিয়তই বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে চর্চা করেন। সার্নের বিষয়ে বহুদিন আগে থেকে জানতেন। আরও জানতে এবিষয়ে গভীর চর্চা শুরু করেন। বহুদিন ধরেই এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছে ছিল। এই লক্ষ্যে মাসখানেক আগে সার্ন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি গবেষণা প্রস্তাব দাখিল করেন। সেটি নিয়ে কিছুদিন আগে মুম্বইয়ে আয়োজিত অ্যালিস-ইন্ডিয়ার কোলাবোরেশন বোর্ডের সভায় আলোচনা হয়। মনের ভিতর সুপ্ত ইচ্ছেটা হয়তো কোনও একদিন পূর্ণ হবে বলে প্রবীর ভেবেছিলেন কিন্তু তা যে এত তাড়াতাড়ি হবে ভাবতে পারেননি। প্রবীর বললেন, ‘সার্নের তরফে আমার গবেষণা প্রস্তাবটির বিষয়ে যে এত তাড়াতাড়ি জবাব আসতে পারে সে বিষয়ে কোনও ধারণা ছিল না। আমার ওই গবেষণা প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়েছে বলে অ্যালিস-ইন্ডিয়া কোলাবোরেশনের মুখপাত্র ও ভারত সরকারের গবেষণা সংস্থা ভ্যারিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টারের (ভিইসিসি) প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী ডঃ জুবায়ের আহমেদ তাঁর সম্মতিপত্র পাঠিয়ে আমাকে জানিয়েছেন।’
সার্নের সঙ্গে তাঁর যুক্ত হওয়ার বিষয়টি কীভাবে উত্তরবঙ্গের গবেষকদের কাছে নতুন দরজা খুলে দেবে? প্রবীর বললেন, ‘সার্নের সহযোগী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হওয়াটা পিবিইউয়ের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা সার্নের পরীক্ষাগারে গিয়ে হাতেকলমে উচ্চশক্তি সমন্বিত কণাবিজ্ঞানে গবেষণার সুযোগ পাবে।’ গবেষণা প্রস্তাবটির বিষয়ে পড়ুয়া-গবেষক আজাহারউদ্দিন আহম্মেদ, শুভদীপ পাল ও টুম্পা বিশ্বাস তাঁকে সহযোগিতা করায় প্রবীর তাঁদের কাছে আক্ষরিক অর্থেই কৃতজ্ঞ। তবে পিবিইউয়ে বর্তমানে উপাচার্যের অনুপস্থিতির কারণে গোটা বিষয়টিতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা। সবকিছু অবশ্য ভালোয় ভালোয় মিটবে বলেই সহকর্মীরা তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন।