রাজগঞ্জ: স্কুল মানেই প্রচুর সংখ্যক পড়ুয়া, শিক্ষক, হইচই, চিৎকার ইত্যাদি। কিন্তু রাজগঞ্জ (Rajganj) ব্লকের সুখানি গ্রাম পঞ্চায়েতের চাওইডাঙ্গি জুনিয়ার হাইস্কুলে দেখা যাচ্ছে অন্য ছবি। আস্ত একটা স্কুলে (school) রয়েছেন মাত্র একজন শিক্ষক এবং দুজন ছাত্র। ফলে স্কুলটি এখন বন্ধ হওয়ার দোরগোড়ায়। নতুন নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এই সমস্যা মেটার নয় বলে জানিয়েছেন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক।
ওই শিক্ষক কোথাও কোনও কাজে গেলে বন্ধ হয়ে যায় স্কুলের পঠনপাঠন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাসের অর্ধেক দিন এদিক-ওদিক অফিসের কাজের কথা বলে স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক। তাঁরা জানান, যেদিন তিনি অফিসে যান, সেদিন স্কুলে আসেন না।
একজন অশিক্ষক কর্মচারী এবং একজন চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার শিক্ষক থাকলেও ক্লাসের পঠনপাঠনের মান খারাপ। এই কারণে তাঁরা স্কুল থেকে নিজেদের ছেলেমেয়েদের বেশ খানিকটা দূরে প্রধানপাড়া গমিরুদ্দিন হাইস্কুল এবং রাজগঞ্জ এমএন হাইস্কুলে পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন। স্কুলে গিয়েও দেখা যায় ঘর তালাবন্ধ। খানিকক্ষণ বাদে সেখানে আসেন অশিক্ষক কর্মচারী ফলেন দেবশর্মা। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক কোথায়, জিজ্ঞেস করতেই তাঁর সটান উত্তর- ‘তিনি ডিআই অফিসে গিয়েছেন।’
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে তৈরি এই স্কুলটি এভাবেই নিভু নিভু করে চলছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্কুলে একসময় ১৩২ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। সঙ্গে বেশ কয়েকজন অতিথি শিক্ষকও ছিলেন। নিয়মের বাধ্যবাধকতায় অতিথি শিক্ষকদের বয়স ৬৫ পেরিয়ে যাওয়ায় তাঁরা আর আসেন না। পঠনপাঠন তলানিতে এসে ঠেকে।
এলাকার বাসিন্দা বুজার মোহম্মদ, ময়মল হক, ফিরোজা বেগমরা একসুরে জানান, তাঁদের অনেক আশা ছিল, প্রাথমিক স্কুলের পাট চুকিয়ে ছেলেমেয়েরা অন্তত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এখানেই পড়াশোনা করতে পারবে। শুরুর দিকে এখানে পড়াশোনা করতে পাঠালেও এখন আর পাঠান না। ফলে ছেলেমেয়েদের অনেকটা দূরে গিয়ে পড়াশোনা করতে হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে এলাকার বাসিন্দা তথা প্রাক্তন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য জীবনগতি রায় বলেন, মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে চারটি শ্রেণিতে পঠনপাঠন সম্ভব নয় ভেবে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা অন্যত্র চলে গিয়েছে।’
ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক রাহুল চৌধুরীর সাফাই, তিনি ডিআই অফিসে গিয়েছিলেন। কম্পিউটারের চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক আবদুল মান্নানের ম্যারেজ অ্যানিভারসারি থাকায় তিনিও ছুটিতে। এদিকে রাজগঞ্জ-৩ এর অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অনুপ হালদার বলেন, ‘ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা নিয়ে আমি খুব দ্রুত ডিআই মাধ্যমিকের সঙ্গে আলোচনায় বসব। শিক্ষকের সমস্যার জন্যই এলাকার পড়ুয়ারা অন্যত্র চলে যাচ্ছে। আশপাশের কোনও অতিথি শিক্ষকও পাওয়া যাচ্ছে না।’