রানিগঞ্জ ও আসানসোলঃ স্কুল চলাকালীন নিজের চেম্বারে আক্রান্ত হলেন প্রধান শিক্ষক। তাঁর উপরে চড়াও হয়ে হামলা চালিয়ে বাঁহাতের একটা আঙুল ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঐ স্কুলেরই এক সহ শিক্ষকের বিরুদ্ধে। শনিবার সকালে এমনই নজিরবিহীন ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার রানিগঞ্জ শহরের রানিগঞ্জ হাইস্কুলে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে রানিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রহৃত প্রধানশিক্ষক।
জানা গিয়েছে, প্রহৃত শিক্ষকের নাম প্রতীক চট্টোপাধ্যায়। তিনি রানিগঞ্জ হাইস্কুলে ২০১৯ সাল থেকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন। অন্যদিকে অভিযুক্ত বিজয় দাস ঐ স্কুলে ১৬ বছর ধরে বাংলার শিক্ষকতা করেন। তার স্ত্রী পাপিয়া মণ্ডল ঐ স্কুলেরই বাংলার শিক্ষিকা হিসাবে কর্মরত আছেন। এদিন সকালে পাপিয়া মণ্ডলের ক্লাস নেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষকের বচসা বাধে বিজয় দাসের। সেই সময়ই প্রধানশিক্ষক প্রতীক চট্টোপাধ্যায়ের ওপর হামলা চালিয়ে হাতের আঙুল ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ। গুরুতর আহত স্কুলের প্রধান শিক্ষককে রানিগঞ্জের আলুগড়িয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্যে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে এই ঘটনার পরে একদল ছাত্রকে রানিগঞ্জ থানায় নিয়ে যান শিক্ষিকা পাপিয়া মণ্ডল। অভিযোগ, থানায় শিক্ষিকা নিজের হয়ে ছাত্রদের দিয়ে বয়ান দেওয়ানোর চেষ্টা করেন। প্রধান শিক্ষক সরাসরি শিক্ষক দম্পতির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ঐ শিক্ষক স্বামী ও স্ত্রী ভালো করে ক্লাস নেন না। স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছেন।
যদিও শিক্ষক দম্পতি প্রধান শিক্ষকের করা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা উল্টে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অত্যাচার ও নির্যাতন চালানোর অভিযোগ করেছেন। প্রধানশিক্ষক রানিগঞ্জ থানায় বিজয় দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত ঐ শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি স্কুলের সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে ঘটনাটি ঠিক কি, সে সম্পর্কে খোঁজ ও তদন্ত শুরু করেছে রানিগঞ্জ থানার পুলিশ। এই ঘটনার পরে ব্যাপক উত্তেজনা রানিগঞ্জ থানা ও রানিগঞ্জ হাইস্কুল চত্বরে।
এই ঘটনা সম্পর্কে পশ্চিম বর্ধমান জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক সঞ্জয় পাল বলেন, ‘ঘটনার কথা শুনেছি। আমি গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে জেলা স্কুল পরিদর্শককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলেছি।’
এই স্কুলের পরিচালন সমিতি বা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তথা রানিগঞ্জের বিধায়ক তাপস বন্দোপাধ্যায় গোটা ঘটনার নিন্দা করেছেন। তাঁর দাবি, ‘প্রধান শিক্ষক খুবই দক্ষ। শিক্ষক দম্পতি বিশেষ করে শিক্ষক বিজয় দাসের ব্যবহার খুবই খারাপ। এদের বিরুদ্ধে আগেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ডিআই সহ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এদিনের ঘটনাও অত্যন্ত নিন্দাজনক। আশা করি পুলিশ প্রশাসন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য শিক্ষক সংগঠনের ( মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক) নেতা রাজীব মুখোপাধ্যায়ও এই ঘটনার নিন্দা করে প্রধান শিক্ষকের পাশে দাঁড়িয়েছেন।