কিশনগঞ্জঃ ধর্ম গোপন করে প্রেম, বিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্মান্তকরণের জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে বিহারের আরারিয়া থানার পুলিশ। ধৃত যুবকের নাম মহম্মদ তনবীর আখতার ওরফে লেক খান। অভিযুক্ত ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার রাতে নেপালে পালাতে গিয়ে নেপাল সীমান্তবর্তী এলাকা সিকটি থেকে লেক খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধৃতকে আজ আরারিয়া আদালতে তুলে ট্রানজিট রিমাণ্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাঁচিতে।
জানা যাচ্ছে, তনবীর আখতার খান একটি মডেল কোম্পানির মালিক। কাজের সুবাদেই রাঁচির মডেল মানবী রাজের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। মানবীর অভিযোগ, তনবীর তাঁকে যশ বলে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন। কাজের সুবাদেই তাঁদের বন্ধুত্ব হয়। কিছুদিনের মধ্যে মডেল মানবী জানতে পারে ওই ব্যক্তির নাম আদপে যশ নয় তনবীর। মানবী রাজের আরও অভিযোগ, তনবীর তাঁকে বিয়ের জন্য জোর করতে থাকেন এবং ধর্ম বদলের জন্য চাপ দিতে থাকেন। তিনি অস্বীকার করলে তাঁর আপত্তিকর ছবি ভাইরাল করার হুমকিও দেন। অভিযোগ মানবী রাঁচি থেকে মুম্বই আসার পরও তনবীর তাঁর পিছু ছাড়েননি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মহম্মদ তনবীর আখতার ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। আর তাঁর প্রেমিকা মুম্বইয়ের মডেল যুবতী মানবী ভাগলপুরের বাসিন্দা। অভিযোগকারী মানবী রাজ জানিয়েছেন, ২০২০-র লকডাউনের পর গ্রুমিংয়ের জন্য তিনি তনবীরের মডেলিং কোম্পানিতে যোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগ, ২০২১-এর ২৯ মার্চ হোলির দিন তাঁর পানীয়তে নেশার কোনও ওষুধ মিশিয়ে দেন তনবীর। তারপরই নগ্ন ছবিও তোলা হয়। এরপর ১৪ এপ্রিল যখন সকলে অফিস থেকে বাড়ি চলে গেলে তাঁর সঙ্গে জোর করে শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন তনবীর। মানবী অস্বীকার করলে তাঁকে তাঁর ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা হয়। এরপর ১৫ এপ্রিলও জোর করে তাঁর সঙ্গে শারীরিক ভাবে ঘনিষ্ঠ হন অভিযুক্ত যুবক। এরপর থেকে মানবীকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন তিনি। ধর্ম বদলের জন্যও জোর করতে থাকেন। তিনি একপ্রকার বাধ্য হয়েই মুম্বই চলে আসতে বাধ্য হন। তাঁর আরও অভিযোগ, মানবীর অশ্লীল ছবি তাঁর মা ও ভাইকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাঁকে জোর করে বহুবার ধর্ষণ করা হয়, ফের ধর্ম বদলে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া শুরু করেন অভিযুক্ত যুবক।
গত ২৯ মে মুম্বইয়ের ভারসোভা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মানবী রাজ। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারসোভা থানায় একাধিক আমিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে ঘটনাটি যেহেতু রাঁচিতে ঘটেছিল, তাই এই মামলা রাঁচি পুলিশের কাছে হস্তান্তরিত করা হয়েছে বলে জানায় মুম্বই পুলিশ।
এদিকে তনবীর পরিস্থিতি বেগতিক দেখে গা ঢাকা দেন। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করতে তৎপর হয় রাঁচি থানার পুলিশ। তনবীরের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে পুলিশ জানতে পারে নেপাল সীমান্তবর্তী সিকটি গ্রামে রয়েছে অভিযুক্ত। বিহারের আরারিয়া পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে নেপাল সীমান্তবর্তী গ্রাম সিকটি থেকে বুধবার রাতে তনবীরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আরারিয়ার পুলিশ সুপার অশোক সিং জানান, তনবীর গ্রেপ্তার এড়াতে নেপালে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। তাঁর আগেই পুলিশ তাঁকে ধরে ফেলে। ধৃতকে আরারিয়া আদালতে তুলে ট্রানজিট রিমাণ্ডে রাঁচিতে নিয়ে গিয়েছে ঝাড়খণ্ড পুলিশ।