কুমারগ্রাম: কুমারগ্রাম চা বাগানের কারখানা ঘেঁষে প্রাইমারি স্কুলের পাশ দিয়ে গ্রাভেল রাস্তা ধরে উত্তর দিকে কিছুটা এগোলেই দশরথ তিরকির বাড়ি। চা বাগানের মধ্যে পাশাপাশি দুটি বিল্ডিং। একটি অফিস ঘর, সেইসঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য বরাদ্দ। অপরটিতে পরিবার নিয়ে থাকেন দশরথ নিজে। বাম আমলে সকাল-সন্ধ্যা এই দুটি বিল্ডিংই মানুষের ভিড়ে গমগম করত।
বাম বিধায়ক তথা তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী ঘুম থেকে ওঠার আগেই সাধারণ মানুষ নানা সমস্যা নিয়ে হাজির হতেন তাঁর বাড়ির সামনে। তারপর দশরথ দল বদলালেন। খানিক ভাঁটা পড়লেও তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ থাকাকালীনও দশরথকে নিয়ে সাধারণ মানুষের উন্মাদনা ছিল যথেষ্ট। তারপর আবার নাম লেখালেন গেরুয়া শিবিরে। বারবার দলবদলের কারণে স্থানীয় রাজনীতিতে দশরথের সেই আগের ‘ক্রেজ’ এখন অনেকটাই ম্রিয়মাণ, বলছেন স্থানীয়রাই। তিনি দলীয় সংগঠনে গুরুগম্ভীর পদ পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু স্থানীয় রাজনীতিতে তাঁকে লোকজন খুব একটা চোখেই দেখতে পান না।
এখন যখন প্রকাশ চিকবড়াইককে নিয়ে তৃণমূলে জোরদার ব্যস্ততা। অথচ গত লোকসভা ভোটেই যিনি ছিলেন ঘাসফুলের প্রার্থী, সেই দশরথ এখন কেমন আছেন? বিজেপিতে গিয়ে এখন কী করছেন? এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে কী কী করছেন? এসব অনেক প্রশ্ন এলাকার বাসিন্দাদের। তাঁদের কথায়, দশরথকে এখন আর আগের মতো কুমারগ্রামে দেখা যায় না। আর তাই গত কয়েক বছরে বাড়ির সামনে সকাল সন্ধ্যায় সাধারণ মানুষের ভিড়ের চেনা ছবিটাও উধাও হয়ে গিয়েছে।
এলাকায় যে কম থাকেন, সেটা দশরথও মানছেন। বলছেন, ‘দলের এসটি মোর্চার রাজ্য সহ সভাপতির পাশাপাশি উত্তরের জেলাগুলোর সাংগঠনিক কাজকর্মের দায়িত্ব রয়েছে আমার কাঁধেই। তাই বাইরে বাইরে থাকতে হয়।’ বিগত দুটি লোকসভা ভোটে আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন দশরথ। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের মুখে দলবদল করে ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মশিবিরে নাম লেখান। সেইসময় বিজেপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একটি অংশ প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল। কয়েকদিন সাধারণ কর্মী হিসেবে কাজ করার পর বিজেপির এসটি মোর্চার রাজ্য সহ সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে সাংগঠনিক কাজে মন দেন দশরথ।
স্থানীয় বাসিন্দারা তো বটেই, বিজেপির সাধারণ কর্মীদের একাংশের কথায়, দশরথ এখন অধিকাংশ সময়ই বাইরে বাইরে থাকেন। জেলার নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ বাদে জনসাধারণের সঙ্গে খুব একটা সংযোগ নেই। একদা দশরথের ভোট সেনাপতি তথা তৃণমূল কংগ্রেসের আলিপুরদুয়ার জেলা সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত ধরের কথায়, ‘দশরথ তিরকি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি। ভোটে লড়ার অভিজ্ঞতাও প্রচুর। তবে এটাও ঠিক যে তিনি সারা বছর সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। অতীতে সাধারণ মানুষ তাঁকে আশীর্বাদ করেছিলেন। এখন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পালটেছে। মানুষের আশাভরসার স্থলও বদলেছে। তিনি জনসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে এলাকাবাসীর মন থেকে হারিয়ে গিয়েছেন।’ দশরথ তা মানছেন না। বলছেন, ‘দল যখন যে দায়িত্ব দিচ্ছে সেটা পালন করছি। যখন কুমারগ্রামে থাকি তখন দলের সমস্ত কর্মসূচিতেই অংশ নেই। বিশেষ করে জেলা স্তরের কর্মসূচিতে আমাকে থাকতেই হয়।’