খড়িবাড়ি: খড়িবাড়ি ব্লকের দুলালজোত নেপালি জুনিয়ার হাইস্কুলে ভোট দেবেন রানিগঞ্জ পানিশালী গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত আন্তারাম ছাট এলাকার বাসিন্দারা। নিজ এলাকা থেকে ৫ কিমি দূরে মেচি নদী পেরিয়ে ভোট দিতে যাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।
ভারত-নেপাল সীমান্তের মেচি নদী পেরিয়ে উঁচু-নীচু অরণ্য ঘেরা এই গ্রাম। পাহাড় ভেদ করে বয়ে চলা মেচি নদীর পাশে ৭০টি পরিবার নিয়ে গড়ে উঠেছে খড়িবাড়ি ব্লকের আন্তারাম ছাট গ্রাম। মানব জীবনের ন্যূনতম পরিষেবা এখনও পৌঁছায়নি এই এলাকায়। ভোট আসে ভোট যায়। কিন্তু উন্নয়ন হয় না। পরিবারের ভরণপোষণের জন্য নেপালের উপর নির্ভরশীল হতে হয় ভারতীয় গ্রামকে। গ্রামের বাসিন্দাদের একমাত্র ভরসাস্থল কৃষিকাজ, মেচি নদীতে মাছ শিকার, বালি পাথর চালাই করে জীবিকা নির্বাহ করা। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করলেও ভাগ্যের কোনও পরিবর্তন হয়নি। উন্নয়ন বঞ্চিত এসব আদিবাসী পরিবার দিনের পর দিন সরকারি সব সুবিধা থেকে পিছিয়ে রয়েছে। রাস্তাঘাট তো দূরের কথা, নেই কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নেই বিদ্যুৎ সুবিধা, পানীয় জলের ব্যবস্থা, র্যাশনের ব্যবস্থা নেই, স্বাস্থ্য পরিষেবা নেই।
যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম মেচি নদীর পথ। বর্ষায় উত্তাল নদীতে পা রাখাই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নেপালের কাঁকরভিটা হয়ে ভারতে আসতে হয়। কবে এই গ্রামের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে জানেন না এলাকার বাসিন্দা প্রেমলাল কিসকু, ধনাই সোরেন, লক্ষ্মীরাম করুয়া, ভরত সোরেন। বয়স প্রায় ৬০ ছুঁই ছুঁই প্রেমলাল কিসকুর দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আন্তারাম ছাটে বসবাস করেন। ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সবকিছুই আছে। তিনি জানান, আমরা নদীর ধারেই কৃষিকাজ করে কোনওরকম সংসার চালাই। এলাকায় বিদ্যুৎ নেই সন্ধ্যা হলেই বাড়িতে ঢুকে পড়ি। হাতি প্রায় প্রতিদিন গ্রাম ঢুকে। কোনও গর্ভবতী মহিলা হলে তাকে পালকি করে বাতাসি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। বর্ষা শুরু হলেই বাচ্চাদের স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। গ্রামে স্কুল নেই তাই মেচি নদী পার করে বাতাসিতে যেতে হয়।
রানিগঞ্জ পানিশালী গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল কংগ্রেসের বোর্ড গঠনের পর প্রধান পদে বসেছেন শান্তনা সিংহ। গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এলাকাটি সীমান্তের একেবারে জিরো পয়েন্টে অবস্থিত। তাই কোনও কাজ করতে গেলে সেখানে সমস্যা হবে। তবে ওই এলাকার উন্নয়ন নিয়ে আমি আগামী বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করব।‘
এলাকার নবনির্বাচিত শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সদস্য বিজেপির অজয় ওড়াওঁ বলেন, ‘ওই গ্রামে আমরা বিধানসভা, লোকসভা ভোটে গিয়েছিলাম। এমপি, এমএলএ ফান্ড থেকে সেখানে কাজ করার প্রস্তাবও দিয়েছিলাম কিন্তু সীমান্ত এলাকা বলে সেখানে কাজ করা যাচছে না। আমরা জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে সেখানে সোলার লাইট লাগানোর ব্যবস্থা করব।‘