আলিপুরদুয়ার: ভোট নাকি উৎসব। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের অনেক নেতার কাছে এই একটা বাক্য হামেশাই শোনা যায়। আবার রাজ্যের বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ থাকে, ভোট আসলেই নাকি সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হয় রাজ্যে। ভোট আসলে এই দুটোর কোনটার সঙ্গেই ঠিক করে পরিচয় হয় না আলিপুরদুয়ারের বক্সা পাহাড়ের গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের।
প্রথমত বক্সা পাহাড়ে ভোট নিয়ে হিংসার খবর যেমন মেলে না, অন্যদিকে ভোটকে উৎসব হিসেবে মানতে নারাজ পাহাড়ের অনেকেই। আর সেটা মনে করার পিছনে অবশ্য কারণও রয়েছে। ভোট উৎসবে স্বতস্ফূর্তভাবে নয়, পাহাড়ি দুর্গম পথ অতিক্রম করেই অনেককেই ভোটকেন্দ্রে আসতে হবে। একদিকে যেমন পাহাড়ের দুর্গম রাস্তা, আরেক দিকে বর্ষায় ধস নামার আশঙ্কা, দুই মিলিয়ে পাহাড়ের ভোট উৎসবের আলো যেন কিছুটা ফ্যাকাশে। বক্সা পাহাড়ের ১৩টি গ্রাম কালচিনি ব্লকের রাজাভাতখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। পাহাড়ের ওই গ্রামগুলোর মধ্যে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১ হাজার। ১৩টি গ্রামের ভোট হয় তিনটি ভোটকেন্দ্রে।
চুনাভাটি গ্রামের বাসিন্দারা ভোট দেন তাঁদের গ্রামে। অন্যদিকে আদমা ,তরিবাড়ি, সেওগাওঁ, পানবাড়ির মতো গ্রামের বাসিন্দারা ভোট দেন আদমা গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে। আবার বক্সদুয়ার বোর্ড ফ্রি প্রাইমারি স্কুলের ভোট কেন্দ্রে ভোট দেন সদর বাজার, বক্সা ফোর্ট, তাশিগাওঁ, লাল বাংলো, খাটালাইন, লেপচাখা, ওছলুং গ্রামের বাসিন্দারা। পাহাড়ি গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের ভয় বর্ষায় ধস নিয়েই। এবিষয়ে তাশিগাওঁয়ের বাসিন্দা মিমা ডুকপা বলেন, ‘রাস্তার যে অবস্থা সেটা নিয়ে সবসময় ভয়ে থাকি। এমনি সময়তেই পাহাড়ি রাস্তায় বিপদ। বর্ষায় তো আরও বেশি ভয়। ধস নামলে ভোট দেওয়া নাও হতে পারে আমাদের গ্রামের বাসিন্দাদের।’
বক্সা ফোর্ট পাহরের প্রায় ২৭০০ ফুট উঁচুতে। সেখান থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা হাঁটা পথে তাশিগাওঁ গ্রাম। আবার ফোর্ট থেকে এক ঘণ্টা হাঁটা পথে আরেক দিকে লেপচাখা। ওই গ্রামের উপরে ওছলুং। স্বাভাবিকভাবেই বর্ষায় এত দূর রাস্তা এসে ভোট দেওয়া অনেকটাই সমস্যার। তবে বৃষ্টি না থাকলে সবাই যে ভোটে অংশ নেবে সেটাও শোনা গেলো অনেকের কাছে। লালবাংলো গ্রামের বাসিন্দা ইয়েসি ডুকপা নামে এক যুবকের বলেন, ‘আমাদের গ্রামগুলোয় অনেক সমস্যাই রয়েছে। তবুও সব ভোটেই আমরা অংশ নেই। এবারও নেওয়া হবে।’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাহাড়ে একবার রাস্তার ক্ষতি হলে অনেকদিন পর সেটার সংস্কার হয়। গত বছর বর্ষায় সদর বাজারের কাছে রাস্তায় এক জায়গায় ধস নামে এক বছর পর সেটার সংস্কার শুরু হয়েছে বলেও জানা গেল। এই রকম কোনও সমস্যা আবার হলে ভোটারদের যে সমস্যা হবে সেটাও অনেকের কথায় স্পষ্ট।