প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: মণিপুর ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সংসদে এসে বক্তব্য রাখতে হবে। গত সপ্তাহে রাজ্যসভায় এই বিষয়ে আগ্রাসী বক্তব্য রাখার পরেই তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের মন্তব্য রাজ্যসভার রেকর্ড থেকে ছেঁটে ফেলা বা ‘এক্সপাঞ্জ’ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকর। সোমবার তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ এবং বিশিষ্ট তথ্যের অধিকার কর্মী সাকেত গোখলের ক্ষেত্রেও বহাল রইল একই নির্দেশ। রাজ্যসভার রেকর্ড থেকে ছেঁটে ফেলা হল সাকেতের মন্তব্য।
প্রসঙ্গত, সোমবারেই প্রথমবার রাজ্যসভায় পা রাখেন তৃণমূল কংগ্রেসের নব্য-মনোনীত সাংসদ সাকেত গোখলে। এদিন রাজ্যসভা সাংসদ রূপে আনুষ্ঠানিক ভাবে শপথগ্রহণও করেন সাকেত। দলীয় সূত্রের দাবি, ইংরেজিতে শপথবাক্য পাঠ করলেও বক্তব্যের শেষে ‘জয় হিন্দ’, ‘জয় বাংলা’ এবং দলীয় স্লোগান ‘মা-মাটি-মানুষের জয়’ এমন জয়ধ্বনি তোলেন তিনি। আর এতেই অসন্তুষ্ট হন রাজ্যসভা চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকর। তৎক্ষণাৎ আসে কড়া নির্দেশ, ‘জয় হিন্দ’ ব্যতিত অন্য দুটি জয়ধ্বনি অর্থাৎ ‘জয় বাংলা’ এবং ‘মা-মাটি-মানুষের জয়’ রাজ্যসভার রেকর্ড থেকে ছাঁটাই করার জন্য। চেয়ারম্যানের নির্দেশ, বলাবাহুল্য, অক্ষরে অক্ষরে পালন করে রাজ্যসভা সচিবালয়। এই নির্দেশে হতবাক সাকেত নিজেও। সংসদে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় আমি স্তম্ভিত, মর্মাহত! কোন যুক্তিতে এহেন সিদ্ধান্ত তা বোধগম্য হচ্ছে না।’ সাকেতের যুক্তি, ‘প্রথমবার সাংসদ রূপে শপথ নিলাম আজ। কোনও অসংসদীয় বা অসম্মানজনক মন্তব্য করিনি। রাজ্যের নামে বা দলের নামে জয়ধ্বনি অনেকেই দিয়ে থাকেন আবেগতাড়িত হয়ে, আমিও সেই দলেই সংযোজিত। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমার বক্তব্য ছাঁটাই করা হল, যা অপ্রত্যাশিত।’
সাকেতের শপথবাক্যের কিছু অংশ রাজ্যসভার রেকর্ড থেকে ছাঁটাই হওয়ায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ তৃণমূল শিবির। এদিন দলের রাজ্যসভা দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন উষ্মাপ্রকাশ করে বলেন, ‘এই ঘটনা হৃদয়বিদারক। তরুণ প্রজন্মের সাংসদ, মাত্র ৩৬ বর্ষীয় সাকেত গোখলে আজ প্রথমবার রাজ্যসভায় শপথ নিলেন। অথচ তার সঙ্গে কিনা এমন ঘটনা। অবশ্য এই ঘটনা অপ্রত্যাশিত নয়। যদি প্রধানমন্ত্রীর নাম উচ্চারণ করার জন্য শাস্তি পেতে হয়, আঞ্চলিক আবেগ সেখানে ঠাঁই পাবে কেন? এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
সূত্রের দাবি, এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে রাজ্যসভা চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকরের কাছে এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনার জন্য বিশেষ পত্রপ্রেরণ করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। তবে এদিন সংসদে পা রেখে বিরোধী শিবিরের তরফে বাঁধভাঙা শুভেচ্ছায়, আন্তরিকতায় ভেসে গিয়েছেন সাকেত। অনেকেই তথ্যের অধিকার আইন প্রয়োগ নিয়ে তাঁর সাহায্য চেয়েছেন। হাসিমুখেই সতীর্থদের সম্ভাব্য সবরকম সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের তরুণ রাজ্যসভা সাংসদ সাকেত গোখলে।