অনির্বাণ চক্রবর্তী, কালিয়াগঞ্জ: বালি মাফিয়াদের (Sand Mafia) দাপটে ত্রস্ত কালিয়াগঞ্জ। গ্রীষ্মের মরশুমে টাঙন এখন চোরাকারবারিদের স্বর্গরাজ্য। দক্ষিণ ও উত্তর দিনাজপুরের ধার ঘেঁষে সক্রিয় বালি চোরাকারবারিদের হদিস পেল কালিয়াগঞ্জের(Kaliaganj) ভূমি দপ্তর এবং পুলিশ প্রশাসন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাধিকাপুরের ফরিদপুরের বাসিন্দা, বালি মাফিয়া সাহিদ আলম ও মহিদুর রহমানের অঙ্গুলিহেলনেই সেফ করিডর হিসাবে উত্তর দিনাজপুরের শিবকালীঘাট এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের ডোডাঘাটকে কেন্দ্র করেই দুষ্কৃতীরা তাদের রাজত্ব বিস্তার করেছে।
শুক্রবার দুপুরে কালিয়াগঞ্জ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিক সুমন তামাং এবং থানার আইসি দেবব্রত মুখোপাধ্যায় সহ বিশাল পুলিশবাহিনী ফরিদপুরের শিবকালী এলাকায় হানা দেন। টাঙন নদী থেকে তোলা একাধিক বিশাল বালির ঢিপি দেখে তাঁদের চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড়। এদিন ফরিদপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আর্থমুভার ব্যবহার করে ট্রাক্টরের মাধ্যমে বাজেয়াপ্ত বালি কালিয়াগঞ্জ থানায় আনার কাজ শুরু হয়েছে।
এপ্রসঙ্গে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সুমন তামাং বলেন, ‘কে বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তা আমরা খুব শীঘ্রই সামনে আনব। আরআইকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য বলেছি। তিনি খুব দ্রুত আমাকে এব্যাপারে রিপোর্ট জমা দেবেন।’
দীর্ঘদিন ধরেই টাঙন নদী সংলগ্ন ফরিদপুর এলাকা বালি মাফিয়াদের কাছে স্বর্ণখনি। সূর্য ডুব দিতেই এই মাফিয়ারা যেন রাতের পেঁচার মতো বালি চুরিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। জানা যাচ্ছে, কালিয়াগঞ্জ থেকে রাধিকাপুরের ফরিদপুর যাওয়ার রাস্তাজুড়ে পুলিশের নজরদারি এড়াতে স্পাই হিসাবে একাধিক মানুষ পাচারের কাজে লিপ্ত থাকতেন। পুলিশ অথবা প্রশাসনের গাড়ি ওই রাস্তায় যেতেই আগেভাগে স্পাইদের মোবাইল ফোন মারফত খবর পেয়ে যেত এই বালি মাফিয়ারা। মাসের শেষে মোটা অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ থাকত এই স্পাইদের জন্য।
একদিকে শহর ও গ্রামাঞ্চলে অবাধে পুকুর ও শ্রীমতী নদী ভরাটের অভিযোগ, তার সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর টাঙন নদী থেকে অবৈধ উপায়ে নিয়মিত বালি চুরি। মাফিয়াদের দাপটে অতিষ্ঠ প্রশাসন থেকে জনসাধারণ। তবে এই ঘটনার পিছনে বড় ফুল ও জোড়াফুলের নেতাদের মদতের গন্ধ স্পষ্ট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালিয়াগঞ্জের এক নাগরিকের বক্তব্য, ‘যে-কোনও চুরিতেই গেরুয়া ও সবুজ মিলেমিশে একাকার।’
কালিয়াগঞ্জ থানার আইসি দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘দক্ষিণ দিনাজপুরের ডোডাঘাট থেকে কেউ অথবা কারা টাঙনের বালি ফরিদপুর এলাকায় মজুত করেছে। এখনও পর্যন্ত ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের তরফে কারও নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। আমরা উদ্ধার করা বালি বাজেয়াপ্ত করে থানায় জমা করছি।’