প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার: ২২ এপ্রিল থেকে রাজ্যের স্কুলগুলিতে (School) গরমের ছুটি (Summer vacation) ঘোষণা হওয়ায় শিক্ষক ও অভিভাবক মহলে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। একাংশ শিক্ষক ও অভিভাবকদের বক্তব্য, দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় উত্তরবঙ্গের তাপমাত্রা এখনও অনেকটাই কম রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন এখনই ছুটি ঘোষণা করা হল। উত্তরবঙ্গে এই সময় তাপমাত্রা ৩০–৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। উত্তরবঙ্গের তাপমাত্রা মে ও জুন মাসে বেশি থাকে। শিক্ষকদের একাংশ বলছেন, দক্ষিণবঙ্গে এই সময় তাপমাত্রা মারাত্মক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গে তো এখন অতটা তাপমাত্রা বাড়ে না। উত্তরবঙ্গে তো মে ও জুন মাসে তাপমাত্রা বাড়ে। সেই সময় স্কুল থাকলে তো পড়ুয়াদের ভোগান্তি বাড়বে। যে উদ্দেশ্যে গরমের ছুটি দেওয়া হয় সেটাই সফল হবে না।
নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক জয়ন্ত সাহা বলেন, ‘আলিপুরদুয়ার সহ উত্তরবঙ্গে এখনও তেমন গরম পড়েনি। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গরমের ছুটি ঘোষণা হলে পঠনপাঠনের উপর প্রভাব পড়বে। এমনকি স্কুলছুটের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। উত্তরবঙ্গের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে স্থানীয় স্তরে সিদ্ধান্ত নিলে সুবিধা হবে। কিন্তু কখনও তা দেখা হয় না কেন বুঝতে পারি না। বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত।’
আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও জলপাইগুড়িতে লোকসভা ভোট চলছে। অনেক স্কুলে কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। ফলে অনেক স্কুল অঘোষিত বন্ধ রয়েছে। ভোটের জন্য কয়েকদিন পঠনপাঠন প্রায় বন্ধ। এরকম পরিস্থিতিতে গরমের ছুটি হলে দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ের পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে পড়ুয়ারা। চা বাগান ও প্রান্তিক এলাকায় স্কুল ছুটি স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে। করোনা পরিস্থিতির পর স্কুলছুট সংখ্যা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতেই অযাচিত ছুটিতে পড়ুয়াদের মনের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) আশানুল করিম বলেন, ‘যেহেতু রাজ্য স্তর থেকে সরকারি আদেশ বেরিয়েছে, আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে আদেশের কপি পাঠিয়ে দিয়েছি। এতে যোগাযোগ ও কাজের ক্ষেত্রে যেন কোনওরকম ভুল বোঝাবুঝি না হয়।’ উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রার অনেকটা পার্থক্য থাকে। তাই স্থানীয় স্তরে শিক্ষা দপ্তরের হাতে গরমের ছুটি ঘোষণার দায়িত্ব দেওয়ার দাবি অনেকের। অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাসংঘের জেলা সম্পাদক পিরাজ কিরণ বলেন, ‘দক্ষিণবঙ্গের পরিবেশের সঙ্গে তুলনা করলে আখেরে পড়ুয়াদের ক্ষতি। আগে ভোট থাকার কারণে অনেক স্কুলে ক্লাস বন্ধ রয়েছে। তার উপর গরমের ছুটির বন্ধ। পঠনপাঠনে ব্যাঘাত ঘটবে।’
তবে এসব মানতে নারাজ তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি কৌশিক সরকারের কথায়, সরকার সবকিছু চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আলিপুরদুয়ারের মতো জায়গাতেই তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছুটি ঘোষণা হলে ক্ষতি কীসের।