গঙ্গারামপুর: দীর্ঘ ৩০ বছরের কর্মজীবন তাঁর। এর মধ্যে প্রথম ৮ বছরে দু’একটি ছুটি নিয়েছিলেন। স্কুলের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এতটাই আন্তরিক যে এরপর টানা ২২ বছর একদিনের জন্যেও ছুটি নেননি তিনি। এরকম দৃষ্টান্ত বিরল বললেও অত্যুক্তি হয় না। কথা হচ্ছে গঙ্গারামপুর শহরের বাসিন্দা রুনু মজুমদার বসাককে নিয়ে। তিনি ১৯৯৪ সালে শহর সংলগ্ন স্কুল সরস্বতী শিশু মন্দিরে শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। স্কুল অন্তপ্রাণ এই শিক্ষিকা বৃহস্পতিবার ৬০ বছর পূর্ণ করলেন। নিয়ম মেনে এদিন কর্মজীবন থেকে অবসর (Retirement) গ্রহণ করলেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই প্রিয় শিক্ষিকার অবসর গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ে বিষাদের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। চোখের জলেই এদিন তাঁকে বিদায় জানান ছাত্রছাত্রী ও সহকর্মীরা।
এবিষয়ে শিক্ষিকা রুনু মজুমদার বসাক জানান, ‘১৯৯৪ সালে প্রথম এই বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি। তারপর থেকে দীর্ঘ ৩০ বছর নিরলস ভাবে ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়েছি। ছোট ছোট শিশুরা আমার কাছে দেব-দেবীর মত। তাদের সঙ্গে থাকবার কী যে আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমি খুবই সৌভাগ্যবতী তাই অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞান বিতরণের মাধ্যমে সেবা করতে পেরেছি। সকলের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে।‘ তিনি আরও জানান, ‘গত ২২ বছরে আমি কোনও ছুটি নেইনি। তার কারণ সহকর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের ছাড়া থাকতে আমার একদমই ভালো লাগেনা। এখন হয়তো আক্ষরিক অর্থে অবসর পেলাম, তবে মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলেই বিদ্যালয়ে আসব। বিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক থেকেই যাবে।‘
বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সদস্য বলরাম দাস বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মাঝে মধ্যেই ফাঁকিবাজি সহ নানা অভিযোগ শুনতে পাই। সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে এই শিক্ষিকাকে দেখে আমাদের শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যায়। দীর্ঘ ৩০ বছরের কর্মজীবনে ২২ বছর তিনি কোনও ছুটি নেননি। নিরলস ভাবে ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়েছেন। কতটা আত্মত্যাগ থাকলে এমনটা করা যায়! এমন শিক্ষিকা সমাজের আদর্শ হওয়া উচিত।’