নাগরাকাটা: শততম বর্ষে পা রাখতে চলেছে চম্পাগুড়ির সেক্রেট হার্ট চার্চ। ডুয়ার্সের সবচেয়ে প্রাচীন চার্চ এটাই। এই মুহুর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে চার্চের পক্ষ থেকে। আগামী ২২ অক্টোবর নয়া সাইলি চা বাগানের জঙ্গল লাইন থেকে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হবে। মূল অনুষ্ঠানটি হবে ২৩ অক্টোবর। সেদিন উপস্থিত থাকবেন এদেশে পোপ-এর প্রতিনিধি লিও পল দো জেরেলি। তিনি নয়া দিল্লি থেকে এসে খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীদের তাঁর আশীর্বাদ ও সেই সাথে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করবেন। পাশাপাশি থাকবেন এ রাজ্যের আর্চ বিশপ থমাস ডিসুজা, জলপাইগুড়ি ধর্মপ্রান্ত বা ডাইসির বিশপ ক্লেমেন্ট তিরকী প্রমুখ। চম্পাগুড়ির চার্চের ফাদার সমীর তিরকি বলেন, ‘এই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রচেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখা হচ্ছে না।‘ চার্চের সম্পাদক ও নাগরাকাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সঞ্জয় কুজুর বলেন, ‘ডুয়ার্সের সবচেয়ে প্রাচীন ওই চার্চটি গোটা চা বলয়জুড়ে শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রসারের পাশাপাশি সাম্যের বাণী সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে আজও অক্লান্তভাবে কাজ করে চলেছে। প্রতিষ্ঠানটির শতবর্ষ গোটা ডুয়ার্সবাসীর কাছেই প্রকৃত অর্থেই একটি আবেগক্ষণ মুহুর্ত।‘
২২ ও ২৩ অক্টোবরের কর্মসূচি সফল করে তুলতে বর্তমানে চার্চের ব্যস্ততা তুঙ্গে। গোটা চত্বরকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে বাহারি রঙে। শতবর্ষ উপলক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে দুটি স্মারক ফলক। প্রথমটিতে, শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করা হয়েছে প্রথম ৩ প্রয়াত বিশপদের। অপরটির মাধ্যমে সন্মান জানানো হয়েছে যে সমস্ত বিশিষ্ট জনের উপস্থিত থাকবেন তাঁদের প্রতি। ২৩ অক্টোবরের মূল অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। এখন সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া।
চম্পাগুড়ির চার্চটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৩ সালে। তবে সলতে পাকানোর কাজটি শুরু হয়েছিল লাগোয়া নয়া সাইলি চা বাগানের জঙ্গল লাইনের একটি চার্চ থেকে। সেটি তৈরির কাজ ১৯০৬ সাল থেকে ইতালির আন্তোনি লাজোরানি নামে এক ফাদারের হাত ধরে শুরু হয়। শেষ হয় ১৯১১ সালে। বর্তমানে ওই চার্চটি ধ্বংসাবশেষই শুধু অবশিষ্ট আছে। সেই স্থানে একটি পুরোনো চার্চ তৈরি হচ্ছে। নয়া সাইলি থেকে চার্চটিকে চম্পাগুড়িতে স্থানান্তরিত করা হয় ১৯২৩ সালে। যে কারণে নয়া সাইলি বাগানের চার্চকে আদি হিসেবে ধরে নিয়ে সেখান থেকে ২২ অক্টোবর ক্রুশ সহ একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা চম্পাগুড়ির চার্চ পর্যন্ত আসবে। ২৩ অক্টোবর যীশু পুজো সহ বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে চম্পাগুড়ির চার্চে।
শতবর্ষে পা রাখা চম্পাগুড়ির সেক্রেট হার্ট চার্চে সংরক্ষিত রেজিস্টার জানাচ্ছে ১৯০১ সালের ১৭ এপ্রিল কুমলাই চা বাগানের মংরা নামে এক শ্রমিক প্রথম খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। ফাউন্টেন কলমে লেখা বিবর্ণ হয়ে আসা ওই খাতার প্রতিটি হরফ এখন বয়সের ভারে জীর্ণ হয়ে হলদে বর্ণ ধারণ করেছে। ফাদার সমীর তিরকি বলেন, ‘আমাদের হিসেব অনুযায়ী মিশনারীদের মাধ্যমে ডুয়ার্সে খ্রীষ্ট ধর্ম ও সেই সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংস্কৃতির প্রসারে ১৮৯৮ সাল থেকে পুরোদস্তুর কাজকর্ম শুরু হয়।‘