শিলিগুড়ি: ঐতিহ্য ধরে রেখে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়েকে (ডিএইচআর) আধুনিকতার মোড়ক দিতে চাইছে রেল। তাই পাহাড়পথে ডিজিটাল কিয়স্ক থেকে সেলফি জোন তৈরি, রেললাইনের ধারের জবরদখল উচ্ছেদ থেকে অব্যবহৃত রেল ভবনকে ব্যবহারযোগ্য করে তোলার মতো বিষয়গুলিতে সোমবার কার্যত সিলমোহর পড়ল। রেল বোর্ডের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর (হেরিটেজ) অসীমা মেহরোত্রার উপস্থিতিতে এদিন কার্সিয়াংয়ে ডিএইচআরের একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ঐতিহ্য ধরে রেখে আধুনিক পথে চলার বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ডিএইচআর-এর ডিরেক্টর একে মিশ্র বলছেন, ‘বৈঠকে পরিষেবার মানোন্নয়নে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিছু প্রস্তাব এসেছে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’
প্রতি বছরই যাত্রী সংখ্যা এবং উপার্জনে রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড তৈরি করছে ডিএইচআর। কিন্তু ফি বছর পাগলাঝোরা, তিনধারিয়ার মতো এলাকাগুলিতে ধস নামছে, বন্ধ থাকছে টয়ট্রেন চলাচল। ইঞ্জিনের অভাবে তো এনজেপি এবং দার্জিলিংয়ের মধ্যে একদিন অন্তর ট্রেনের চাকা গড়াচ্ছে। সমতল থেকে পাহাড়, রেললাইন বরাবর জবরদখল তো রয়েইছে। ফলে ডিএইচআর নিয়ে কিছুটা হলেও রুষ্ট ইউনেসকো। অতীতে একাধিকবার বিষয়গুলি নিয়ে ডিএইচআরকে সতর্ক করেছে ইউনেসকো। সম্প্রতি পরিষেবার মানোন্নয়নের জন্য একটি লম্বা চিঠিও পাঠিয়েছে। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর (হেরিটেজ)-এর বৈঠক যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
কার্সিয়াংয়ে বন্ধ থাকা রেলের ছাপাখানাটি কীভাবে অন্য কাজে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়েও এদিন আলোচনা হয়েছে। গুরুত্ব পেয়েছে রেললাইনের ধারের জবরদখল উচ্ছেদ। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের সাহায্য নেবে রেল। ডিএইচআরের আধুনিকীকরণে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন এদিনের বৈঠকে উপস্থিত দার্জিলিং পুরসভার চেয়ারম্যান দীপেন ঠাকুরি। তবে বিকল্প আয়ের পথ দেখিয়ে উচ্ছেদের পক্ষে অসীমা। পর্যটনমন্ত্রকের প্রাক্তন আধিকারিক অসীমা কুতুবমিনার প্রসঙ্গ টেনে আনেন বৈঠকে। তাঁর বক্তব্য, ‘ডিএইচআরের সঙ্গে সংযুক্তি ঘটাতে হবে রেললাইনের ধারের ব্যবসায়ীদের। বিকল্প আয়ের পথ পেলে তাঁরা স্বেচ্ছায় জায়গা ছেড়ে দেবেন। যেমনটা ঘটেছে কুতুবমিনারের ক্ষেত্রে।’
কিন্তু আধুনিকতার মোড়কে ডিএইচআরকে আনার ক্ষেত্রে কী কী করা হবে? রেল সূত্রে খবর, শিলিগুড়ি জংশন, সুকনা, ঘুম, দার্জিলিং স্টেশনে ডিজিটাল কিয়স্ক, বাতাসিয়া লুপে সেলফি জোন, সুকনা, ঘুম ও দার্জিলিংয়ের মিউজিয়ামকে আরও পরিছন্ন এবং আধুনিক করে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কয়েক বছর আগে এমনই কিছু প্রস্তাব রেলকে দিয়েছিল হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (এইচএইচটিডিএন)। শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনকে হেরিটেজের স্বীকৃতি দেওয়া সহ বেশ কিছু প্রস্তাব এদিনের বৈঠকেও দেয় সংগঠনটি। এইচএইচটিডিএনের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যালের বক্তব্য, ‘সময়ের সঙ্গে সামাজিক, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে। প্রযুক্তির ব্যবহারেও বিপ্লব ঘটছে। তাই রেল চাইছে ডিএইচআরকে আরও আধুনিক করে তুলতে। আমরাও কিছু প্রস্তাব দিয়েছি।’