প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ‘স্যার প্লিজ শো ইওর শু!’ সংসদ ভবনের রিসেপশনে মেটাল ডিটেক্টর, স্বয়ংক্রিয় বন্দুক হাতে গুরুগম্ভীর নিরাপত্তারক্ষীরা। চলল মেটাল ডিটেক্টর চেকিং। সারা শরীরে যত না চেকিং চলল তার চেয়ে বেশি নজর সংসদে পা রাখা ব্যক্তিদের জুতোয়৷ বৃহস্পতিবার এমনও দৃশ্য দেখা গেল সংসদ ভবনে।
বুধবারের ঘটনা পালটে দিয়েছে সংসদ ভবনের চেনা দৃশ্য। বৃহস্পতিবার অপেক্ষাকৃত থমথমে ছিল সংসদ ভবন। হাতে গোনা সামান্য কিছু মানুষের আনাগোনা, পদে পদে সিকিউরিটি চেকিং, শান্ত চোখে সাংবাদিকদের মেপে নেওয়া, ‘এখানে ভিড় করবেন না, ওদিকে যান’ বিষয়ক নানা বিধিনিষেধ ওড়াওড়ি করল সংসদ চত্বরে৷ সংসদের প্রধান প্রবেশ দ্বার (মকর দ্বার) রেড টেপ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। সেখানে সাংসদ, কেন্দ্রীয়মন্ত্রীরা ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ নিষেধ। এমনকি নতুন সংসদ ভবনের বিভিন্ন গ্যালারি ও হলগুলিতেও রয়েছে সতর্ক প্রহরা। গোটা অঞ্চল যেন এক নিমেষে পরিণত হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে। এর পাশাপাশি পুরোনো সংসদ ভবনেও দেখা গেল নজিরবিহীন ত্রিস্তরবিশিষ্ট প্রহরা।
গতকাল রাতে সরকারের শীর্ষ স্তরের তরফে দেশের গণতন্ত্রের পীঠস্থানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এজেন্সিগুলিকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে সংসদের নিরাপত্তা ঢেলে সাজাতে হবে৷ এই নির্দেশের যথাযথ প্রতিফলন দেখা গিয়েছে এদিন। যখন সংসদের ভিতরে মাছিও যাতে গলতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্য উঠে পড়ে লাগে নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত এজেন্সিগুলি৷ এরপরই সংসদের নিরাপত্তা বলয় আরও কঠিন করে তোলা হয়, রাতারাতি দুর্গে পরিণত হয় সংসদ ভবন চত্বর৷ সাংবাদিক, আধিকারিক সহ বৈধ পাস হোল্ডারদেরও অন্তত ছটি জায়গায় তল্লাশি করা হয়৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সংসদে প্রবেশ করতে আগ্রহী ব্যক্তিদের প্রত্যেকের জুতো তল্লাশি৷ অবশ্য তার কারণও আছে। গতকাল যে দুজন আগন্তুক সংসদে প্রবেশ করে ধুন্ধুমার বাঁধিয়েছিলেন, তারা জুতোর মধ্যে লুকিয়ে স্মোক বম্ব নিয়ে গিয়েছিলেন, এই তথ্য সামনে আসার পর থেকেই এদিন সবার জুতো খুলে তল্লাশি চালানো হয়৷ এর বাইরে ছিল সাদা পোশাকের নিরাপত্তারক্ষীদের টহলদারি৷ কোথাও কোনও অনভিপ্রেত মুভমেন্ট হচ্ছে কিনা, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিচ্ছিলেন এই নিরাপত্তারক্ষীরা৷ একইসঙ্গে ছিল ঘড়ির কাঁটা ধরে সিসিটিভি ক্যামেরার মনিটরিং৷ সংসদ চত্বরে প্রবেশাধিকার পাওয়া সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সংখ্যাও ছিল এদিন অনেক কম৷ জানা গিয়েছে, অস্থায়ী পাসে যারা সংসদে প্রবেশ করতেন, তাদের অনেকেই এদিন সংসদের ভিতরে ঢুকতে পারেননি৷
এসবের মাঝেই এদিন রাতারাতি সংসদে আসা লোকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে সংসদীয় ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষ৷ প্রতিদিন বিভিন্ন জরুরি কাজে সংসদে পা রাখা মন্ত্রী, সাংসদদের আপ্ত সহায়ক, অন্যান্য অতিথিদের পাস দেওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এদিন ক্যান্টিনে ভিড় প্রায় ছিল না বললেই চলে৷ এত লোককে যে পাস বিলি করা হবে না, সেই তথ্য ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষের কাছে অনেক দেরিতে পৌঁছেছে বলে জানা গিয়েছে। এই কারণে এদিন ক্যান্টিনে বিপুল পরিমাণে খাবার অবিক্রিতই রয়ে যায়৷