সানি সরকার, শিলিগুড়ি: রাম নামে ‘লক্ষ্মীলাভ’। আর এই আশায় বুক বেঁধেছে উত্তরবঙ্গের বাণিজ্যনগরী শিলিগুড়ি(Siliguri)। রাম মন্দির(Ram Mandir) উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে যেভাবে উন্মাদনা বাড়ছে, তাতে ‘রামনবমী’র ব্যবসাকে ছাপিয়ে যাবে, মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। জোগান থেকে চাহিদা বেশি হওয়ায় ‘রাম’ নামের ব্যবসায় ৫০ কোটি টাকার ‘নতুন রেকর্ড’ গড়ার ভাবনা তাঁদের। রাম মন্দির উদ্বোধনের এখনও দুই সপ্তাহ বাকি। এখনই রামের ছবি লাগানো পতাকা থেকে উত্তরীয়, ব্যাচ থেকে ফেট্টি যেভাবে পাইকারি হারে বিক্রি হচ্ছে তাতে শেষ পর্যন্ত ব্যবসার অঙ্ক কোথায় গিয়ে ঠেকবে, স্পষ্ট নয় ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছেও।
অযোধ্যা(Ayodhya) থেকে শিলিগুড়ির দূরত্ব সড়কপথে প্রায় ৭৭০ কিলোমিটার। কিন্তু রাম মন্দির উদ্বোধনের প্রভাব পড়ছে এই বাণিজ্যনগরীতেও। খালপাড়া থেকে সেবক রোড, বিধান মার্কেট থেকে মহাবীরস্থান, সর্বত্রই ব্যবসায় ‘শ্রীরামের জয়ধ্বনি’। বাজারগুলিতে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গ তো বটেই, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতেও রামনামের চাহিদা তুঙ্গে। শিলিগুড়ি থেকে রামের নামের সামগ্রী যাচ্ছে বিহারেও। পতাকার পাইকারি ব্যবসায়ী সুশীল রাজকুমার বলছেন, ‘এখন রামনবমীর থেকেও চাহিদা দ্বিগুণ। অসম, ত্রিপুরা ইত্যাদি রাজ্য থেকে অর্ডার পাচ্ছি। কিন্তু চাহিদা অনুসারে জোগান দেওয়া যাচ্ছে না। গুজরাটের সুরাটে প্রায় প্রতিদিনই অর্ডার দিতে হচ্ছে। বুঝতে পারছি না, শেষ পর্যন্ত অর্ডার অনুযায়ী পর্যাপ্ত পতাকা পাব কি না।’ যেভাবে চাহিদা বাড়ছে, তাতে শেষমুহূর্তে একশো টাকার পতাকা তিনশো টাকায় বিক্রি হতে পারে বলে মনে করছেন সুশীল। একই কথা বললেন বাকিরাও।
ধর্মীয় জোয়ারে বাজার যে নতুন গতি পাবে, সেটা বুঝতে পেরেছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। সুভাষপল্লির নেতাজি মোড়ে তাঁর একটি দশকর্মা ভাণ্ডারের ছোট্ট দোকান রয়েছে। সেই দোকানে বসে এদিন বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরেই রামের ছবি লাগানো জিনিসগুলোর দাম কত, বা তাঁদের পছন্দের জিনিস আছে কি না, জানতে চাইছেন তাঁরা। বুঝতে পারছি, বিক্রি ভালোই হবে। সেজন্য শনিবারের মধ্যে জিনিস আনিয়ে রেখেছি।’
শুধু পতাকা বা ব্যাচ বা উত্তরীয় নয়, শহরবাসী ঝুঁকছেন বিভিন্ন ধাতুতে তৈরি রাম-লক্ষ্মণ-সীতার মূর্তির দিকেও। সেবক রোডের মূর্তি ব্যবসায়ী রতন দাম এই কথাটাই বললেন। তিনি জানান, অনেকে এরকম মূর্তির অর্ডার দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, শহরের ট্রেন্ড কোনদিকে। ইতিমধ্যে অনেক মূর্তি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। বেশ কয়েকটি মূর্তি অর্ডার করে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, অর্ডার দেওয়া মূর্তি সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে ঢুকে যাবে।’ এরকম চলতে থাকলে শিলিগুড়ির ব্যবসায় নতুন রেকর্ড তৈরি হবে বলে মনে করছেন বৃহত্তর শিলিগুড়ি খুচরো ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব রায় মুহুরি। রাম মন্দির নিয়ে যে ‘হুজুগ’ উঠেছে, তাতে রাজনৈতিক লাভক্ষতি কী হচ্ছে, সেটা পরের কথা হলেও ব্যবসার যে নতুন রাস্তা খুলেছে, সেটা স্পষ্ট।