ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি : কলেবরে বাড়তে চলেছে শহর শিলিগুড়ি। অন্তত এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। পুরনিগমের তরফে এ ব্যাপারে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে। মেয়রের দাবি, সেই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছেন মন্ত্রী। পুজোর পরই শুরু হবে মাটিগাড়া, শালবাড়ি, ইস্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন এলাকা ও ফুলবাড়ির একাংশকে শহরের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সমীক্ষার কাজ।
প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে, কোন কোন এলাকা নিয়ে বৃহত্তর শিলিগুড়ি গড়া যায় সেই বিষয়টি যেমন দেখা হবে তেমনই এলাকা বাড়লে শহরের ওয়ার্ডের সংখ্যাও কত বাড়বে, সেটাও মাথায় রাখা হবে। মাটিগাড়ার বাসিন্দা তথা শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তাপস সরকারের অবশ্য দাবি, ‘শুধু মাটিগাড়ার একটা অংশ নয়। গোটা মাটিগাড়া ব্লকটাই শিলিগুড়ি পুরনিগমের অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন। না হলে মাটিগাড়া ব্লক নিয়ে একটা আলাদা পুরসভা করা হোক।’
’৯৪ সালে ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাসের পর শিলিগুড়িতে এখন ৪৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে, মাটিগাড়ার একটা অংশ, শালবাড়ি, ইস্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন এলাকা, ফুলবাড়ি-১ ও ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে বর্ধিত শিলিগুড়ি পুরনিগম গঠন হবে। কারণ, ১৯৯৪ সালের পর থেকে আর শিলিগুড়ি শহরকে বাড়ানোর বিষয়ে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কিন্তু এখন মাটিগাড়া, শালবাড়ি কিংবা ইস্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন এলাকা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত হলেও বাস্তবে এই এলাকাগুলি শহরের বর্ধিত অংশ হয়ে উঠেছে। এখানকার বাসিন্দারা দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে শুরু করে চিকিত্সা সংক্রান্ত যাবতীয় পরিষেবার জন্য শহরের উপরই নির্ভর করেন। কিন্তু পুরনিগমের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন এসব এলাকার লক্ষাধিক মানুষ।
মেয়রের কথায়, ‘পুরনিগমগতভাবে আমাদের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীও এই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করেন। যার ফলে তিনি বিষয়গুলি জানেন। সংলগ্ন এলাকাগুলি নিয়ে শহরটা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর সরকার কী বলে, সেটাও আমরা দেখব। পুরমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি সহমত হয়েছেন।’
মাটিগাড়ার আঠারোখাইকে আলাদা পুরসভা করার দাবি রয়েছে অনেকদিন থেকেই। শিবমন্দির ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার জনঘনত্ব শহরের থেকে কিছু কম নয়। একই অবস্থা মেডিকেল সংলগ্ন এলাকারও। এই এলাকায় একাধিক উপনগরী গড়ে ওঠায় জনসংখ্যা হুহু করে বাড়ছে। বাইপাস সংলগ্ন এলাকারও নগরায়ণ হচ্ছে দ্রুতগতিতে। গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষে এই এলাকাগুলিতে পরিষেবা দেওয়া কার্যত অসম্ভব। তাই শিলিগুড়ি পুরনিগমের আওতায় আনা বা আলাদা পুরসভা না হলে এই এলাকার উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিষেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
এদিকে, সোমবার শিলিগুড়ি শহরের যানজট সমস্যা থেকে শুরু করে মাদক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার সি সুধাকর ও ডিসিপি (ট্রাফিক) অভিষেক গুপ্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন মেয়র গৌতম দেব ও ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার। এই বৈঠকে বেশ কিছু জায়গায় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সিসিটিভি ক্যামেরার জন্য পুরনিগমের কাছে আবেদন করেছেন পুলিশকর্তারা। বৈঠক শেষে মেয়র বলেন, ‘আমরা ৪-৫টি পার্কিং জোন দ্রুত তৈরি করছি। ডন বসকো রোডে ছোট গাড়ি রাখার মতো ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফুটপাথও অনেকটা দখলমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। একদিনে সব দখলমুক্ত করতে পারব না। সেবক রোড ও এসএফ রোডকে কিছুটা চওড়া করা হচ্ছে। বর্ধমান রোডে একটি পুলিশ ফাঁড়ি করা হচ্ছে।’
মেয়র বলেন, ‘পুলিশ থেকে চারটি বড় ক্যামেরা চাওয়া হয়েছে। আমরা সেই প্রস্তাব পরিবহণ দপ্তরকে দেব। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর ও এসজেডিএ-কে সঙ্গে নিয়ে আমরা কাজ করব। পুলিশ ও পুরনিগম যৌথভাবে এবার পুজোর কার্নিভাল করবে।’