রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: এলিভেটেড করিডর (Elevated Corridor) তৈরির কারণে কি শিলিগুড়ি গেট (Siliguri Gate) ভাঙতেই হবে? প্রশাসনিক মহলে এমন প্রশ্নই এখন ঘুরছে। ইতিমধ্যেই যেভাবে খাপরাইল মোড় থেকে দার্জিলিং মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে মাটি ফেলা হয়েছে, নতুন রাস্তার চিহ্নিতকরণ হয়েছে তাতে মাঝের বড় স্তম্ভটি থাকলেও দু’পাশের স্তম্ভ ভাঙা পড়বে অথবা ফ্লাইওভারের নীচে ঢাকা পড়বে, যা কাজে বাধা সৃষ্টি করবে। সেইজন্য এই স্তম্ভ ভেঙে ফেললেই এজেন্সির সুবিধা হবে। কিন্তু বহু চর্চিত এই গেট ভাঙা পড়লে রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের আশঙ্কাও রয়েছে।
তাই শেষ পর্যন্ত গেট বাঁচিয়েই কাজ করা যায় কি না তা এশিয়ান হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখছে। এই নিয়ে এশিয়ান হাইওয়ের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সংবেদনশীল বিষয়, পুরোটাই উপরমহল থেকে দেখছে বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেছেন, ‘রাস্তা চওড়া হলেও যাতে ওই গেট ভাঙা না পড়ে সেই সমীক্ষা করেই স্তম্ভগুলি বসানো হয়েছিল। এলিভেটেড করিডর একটি বড় প্রকল্প। এর জন্য গেট ভাঙা পড়লে পড়বে। পরবর্তীতে আমরা আবার নতুনভাবে গেট তৈরির কথা ভাবব।’
গৌতম দেব উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী থাকাকালীন প্রায় চার কোটি টাকা খরচ করে শিলিগুড়ি গেটের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। ভবিষ্যতে রাস্তা চওড়া হবে ধরে নিয়েই পূর্ত দপ্তরকে দিয়ে সমীক্ষা করিয়ে মাল্লাগুড়ি পুলিশলাইনের দিকে একটি অতিরিক্ত বাতিস্তম্ভ বসানো হয়েছিল। এই গেটের কাজ যখন প্রায় শেষের পথে সেই সময় গৌতমের হাত থেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর দায়িত্ব রবীন্দ্রনাথ ঘোষের হাতে যায়। রবীন্দ্রনাথ এসে বাস্তুকারদের নিয়ে এই গেটের সমীক্ষা করিয়ে খুঁত খুঁজে পান। বিতর্ক শুরু হয়। যেভাবে গেট তৈরি হচ্ছে তাতে তীব্রগতির ঝড় এলে তা ভেঙে পড়তে পারে এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে রবীন্দ্রনাথ দাবি করেছিলেন।
এর পরেই ওই গেটের উপরের কাচের তৈরি অংশ খুলে ফেলা হয়। আবার নতুন করে সেই অংশ তৈরির জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর পুনরায় প্রায় দু’কোটি টাকা বরাদ্দ করে। তার পরেও যে গেট তৈরি হয়েছে সেখানে প্রযুক্তিগত ভুল ছিল। যার জেরে ওই গেট কোনও দিনই উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারেনি বলে ইঞ্জিনিয়ারদের অনেকেই মনে করেন। উদ্বোধনের পর দু’বছর ওই গেটে টিমটিম করে আলো জ্বললেও এখন অন্ধকারে ঢেকে রয়েছে। নিয়মিত আলো জ্বালানো এবং গেটের তদারকির জন্য একজন কর্মীকেও নিয়োগ করা হয়েছিল। সেসবও এখন নেই। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, দামি দামি বৈদ্যুতিক বাতিও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মাটিগাড়ার বালাসন নদী থেকে দার্জিলিং মোড় হয়ে শালুগাড়া পর্যন্ত এলিভেটেড করিডরের কাজ হচ্ছে। ফ্লাইওভারের পাশাপাশি নীচ দিয়ে দু’দিকেই রাস্তাও থাকবে। সবমিলিয়ে দার্জিলিং মোড় এলাকায় ছয় লেনের রাস্তা হবে। শিলিগুড়ি গেট সেই কাজেই বাগড়া দিচ্ছে।