তমালিকা দে, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ি গার্লস প্রাইমারি স্কুলের (Siliguri Girls Primary School) পড়ুয়াদের পোশাক সেলাই করতেই প্রায় এক লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। অথচ অভিভাবকরা (Parents) তাঁদের সন্তানদের এই নীল–সাদা পোশাক পরাতে রাজি নন। শনিবার তাঁদের একাংশ স্কুলে উপস্থিত হয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে ওই পোশাক ফিরিয়ে দেন। আর এই সূত্রেই সরকারি টাকা নষ্টের বিষয়টি প্রকট হয়েছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের বিষয়টিও। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, পোশাক দিতে বারণ করা সত্ত্বেও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তরফে তা তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি পুরনিগমের অধীনে কাজ করে। পুরনিগমের দাবি, স্কুলগুলিতে দেওয়ার জন্য সরকারিভাবে তাদের হাতে পোশাক দেওয়ার জন্যই তা বিলি করা হয়েছে। শিলিগুড়ি গার্লস প্রাইমারি স্কুল স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে পোশাক না দিতে মোৗখিকভাবে জানানোর পর ওই গোষ্ঠী তা পুরনিগমকে জানিয়েছিল কি না তা পরিষ্কার নয়। আর এই সূত্রেই বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টি বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিলিগুড়ি গার্লস প্রাইমারি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা ঋতুপর্ণা গুহ রায় ঘোষ বলেন, ‘পড়ুয়ারা স্কুলে সরকারি পোশাক (School uniform) পরে আসছে না। বিষয়টি আমরা মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্ট স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে জানিয়েছি। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের পোশাক দেওয়া হয়েছে। তাই তা পড়ুয়াদের মধ্যে বিলি করা হয়।’ গোটা বিষয়টি নিয়ে তিনি পুরনিগমের সঙ্গে কথা বলবেন বলে ঋতুপর্ণা জানিয়েছেন। পুরনিগমের শিক্ষা বিভাগের মেয়র পারিষদ শোভা সুব্বার কথায়, ‘স্কুলগুলিতে পোশাক বিলি সংক্রান্ত বিষয়টি ইউপিই সেল দেখে। ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার এই সেলটির দায়িত্বে রয়েছেন।’ রঞ্জন বললেন, ‘সরকারি তরফে এই পোশাক আমাদের হাতে তুলে দেওয়ার পরই তা স্কুলগুলিতে পাঠানো হয়েছে।’ তবে সংশ্লিষ্ট স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তরফে তাঁকে অবগত করা হয়েছিল কি না সে বিষয়ে রঞ্জন কিছু জানাননি।
স্কুলগুলিতে নীল–সাদা পোশাক বিলির পর থেকেই এনিয়ে সমস্যা শুরু হয়। বিভিন্ন জেলার মতো শিলিগুড়িতেও বেশ কয়েকটি স্কুলে এনিয়ে বিরোধিতা শুরু হয়। শিলিগুড়ি গার্লস প্রাইমারি স্কুলে এক হাজার পড়ুয়া রয়েছে। প্রতিটি পোশাক সেলাইয়ের জন্য ১০০ টাকা হিসেবে ধরলে শুধুমাত্র এতেই এক লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার পড়ুয়াদের ব্যাগে একরকম জোর করেই পোশাক ভরে দেওয়া হয়েছিল। শনিবার অভিভাবকরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে তা ফিরিয়ে দেন। শিলিগুড়ি গার্লস প্রাইমারি স্কুলের অভিভাবক যৌথ মঞ্চের তরফে জয় লোধ বলেন, ‘পোশাক লাগবে না বলে গত বছর অভিভাবকদের একাংশ লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও পড়ুয়াদের তা দেওয়া হচ্ছে। এভাবে সরকারি টাকা নষ্টের বিষয়টি কোনওমতেই মেনে নেওয়া যায় না।’ পাশাপাশি, পোশাকের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অভিযোগ, পড়ুয়াদের মধ্যে যে পোশাক বিলি করা হয়েছে তা খুবই নিম্নমানের।
তরাই তারাপদ আদর্শ বিদ্যালয় (প্রাথমিক)–এর পড়ুয়ারা অবশ্য সরকারি পোশাক নিচ্ছে বলে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক বাসুদেব ঘোষ জানিয়েছেন। জ্যোৎস্নাময়ী গার্লস প্রাইমারি স্কুলের ছবিটাও একই বলে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা অতসী রায় জানান। তবে শিলিগুড়ি গার্লস প্রাইমারি স্কুলের পড়ুয়াদের পোশাক বিতর্ক সংশ্লিষ্ট মহলের যথেষ্টই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।