শিলিগুড়ি: বছরের শুরুতেই অমানবিক দৃশ্যের সাক্ষী রইল শিলিগুড়ির শহরতলি। সমাজে কন্যাসন্তানের প্রতি বিরূপ মনোভাব আবার স্পষ্ট করে দিল এক পরিবার। তিন কন্যাসন্তানের পুত্রবধূর চতুর্থ কন্যাকে মৃত সাজিয়ে অন্যের হাতে তুলে দেওয়া হল। প্রশ্ন উঠেছে, সন্তানটিকে বিক্রি করা হয়েছে কি না। মাটিগাড়ায় সদ্যোজাত নাতনিকে অন্য এক দম্পতিকে দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল ঠাকুরদা-ঠাকুমার বিরুদ্ধে। নরেন দাস ও তাঁর স্ত্রী বেলাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই দম্পতিকেও।
নরেনের পুত্রবধূ বিশাখার ডিসেম্বরের ১২ তারিখ বাড়িতেই এক কন্যাসন্তান হয়। পরদিন উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আরও এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন বিশাখা। অভিযোগ, এক সপ্তাহ পর বাড়ি ফিরে শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে জানতে পারেন, ওই কন্যাসন্তানের মৃত্যু হয়েছে।
বিশাখার আগে তিন কন্যাসন্তান রয়েছে। বয়স ১০, ৯ এবং ৩। তিন মাস আগে বিশাখার স্বামী সুদাসন দাস মারা যান। এই কারণেই ওই সদ্যোজাতকে কাওয়াখালির ওই দম্পতির হাতে বেলা ও নরেন দিয়ে দিয়েছিলেন কি না, তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
কী করে ফাঁস হল এমন অমানবিক ঘটনা? জানা গেল, গত শনিবার ব্যাংকের কাজের নাম করে নরেন ও বেলা শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান বিশাখাকে। তখন বিশাখা জানতে পারেন, তাঁর মেয়ে জীবিত। গুরুতর অসুস্থ সেই শিশুকে আইসিইউতে ভর্তি করাতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কন্যাসন্তান ছিল কাওয়াখালির রজত বিশ্বাস ও সোমা বিশ্বাসের কাছে। যাঁদের কোনও কন্যাসন্তান নেই। এরপরই রবিবার শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে সদ্যোজাতকে অসৎ অপহরণের অভিযোগে মাটিগাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বিশাখা।
বিশাখার হয়ে সরব হন দেওর সঞ্জয় দাস। বাবা ও মার বিরুদ্ধে বলেন, ‘ওঁরা বলেছিলেন বাড়ির পেছনেই সদ্যোজাত ওই শিশুর দেহ পুঁতে দিয়েছেন। এরপর শনিবার শুনতে পাই, বিশাখাকে নিয়ে মা-বাবা জেলা হাসপাতালে গিয়েছেন। রবিবার সেখানে গিয়ে দেখি, বিশাখার নামেই ওই কন্যাসন্তানকে ভর্তি করা হয়েছে।’ এরপর কন্যাসন্তানকে তাঁর কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান বিশাখা। রজত ও সোমা রাজি না হলে বিশাখাকে নিয়ে মাটিগাড়া থানায় যান সঞ্জয়। সেখানেই চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে তুলে ধৃতদের নিজেদের হেপাজতে নিয়েছে পুলিশ।
যমজ দুই পুত্র ও কন্যাসন্তানের জন্ম একদিনের ব্যবধানে হয় কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। শহরের চিকিৎসক গাইনিকলজিস্ট শৈলেশ রায় বলেন, ‘এতে অসম্ভবের কিছু নেই। আমিও একবার এধরনের একটা ঘটনা দেখেছিলাম। এর পেছনে চিকিৎসার ভাষায় বেশ কিছু কারণ রয়েছে।’