সানি সরকার, শিলিগুড়ি: ফের ধসের কবলে সেবক-রংপো রেল প্রকল্প। ধসের ধাক্কায় ভেঙে পড়ল প্রকল্পটির একটি টানেলের ছাদ। ঘটনায় কোনও প্রাণহানি না ঘটলেও টানেলটি ধসে যাওয়ায় প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। রেল সূত্রের খবর, ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ নম্বর টানেলটি নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। অর্থাৎ ২০২৪-এ প্রকল্পের কাজ যে শেষ হচ্ছে না, তা স্পষ্ট। তেমন ভাবেই অন্ধকারে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়ে সেবক-রংপোর মধ্যে ট্রেনের ছুটে চলার বিষয়টি।
টানেলের ছাদ ভেঙে পড়া স্বীকার করে নিয়ে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে বলছেন, ‘পাঁচ নম্বর টানেলে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। কী কারণে এমন ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কাজ বন্ধ নেই। প্রকল্পটির অন্য অংশে যথারীতি কাজ হচ্ছে।’ তবে এই ঘটনায় নির্মাণের গুনগত মান নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনই ঘটনার জেরে নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এমনই এক কর্মী বলেন, ‘ঘটনাটি দুপুরে খাবার সময় হওয়ায় এবং টানেলের বাইরে থাকায় আমরা বেঁচে গিয়েছি। অন্যথায় কয়েকজনের মৃত্যু নিশ্চিত ছিল। এমন ঘটনায় ভয় তো লাগবেই।’
সেবক-রংপো রেল প্রকল্প যেন বিভীষিকার পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিমের মধ্যে ট্রেন ছোটার প্রতীক্ষায় যখন দুই রাজ্যের বাসিন্দারা, তখন একের পর এক দুর্ঘটনা যেন প্রকল্পটিকে ক্রমশই বিশবাঁও জলের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পাঁচ নম্বর টানেলের ছাদ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে। লোহাপুল এলাকায় থাকা টানেলটির প্রায় তিনশো মিটার ছাদ ভেঙে পড়ায় সেখানে সমস্ত কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। ঘটনার তদন্ত করতে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিকে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনুসন্ধান কমিটি নির্মাণ সামগ্রী, ভেঙে পড়া অংশের নমুনা সংগ্রহ করেছে। কমিটির সদস্যরা কথা বলেছেন সেখানে কর্মরত বাস্তুকার এবং কর্মীদের সঙ্গে।
এক কর্মী বলেন, ‘আমরা যা দেখেছি বা জানি, সমস্তটাই জানিয়েছি।’ ঘটনার কয়েকদিন আগে থেকেই লোহাপুল এলাকায় প্রবল বর্ষণ হয় বলে তিনি জানান। ছাদ ভেঙে পড়ার পর থেকেই পাঁচ নম্বর টানেলের কাজ সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। ফলে সেবক-রংপোর মধ্যে কবে ট্রেনের চাকা গড়াবে, সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে প্রকল্পটির কাজ পুরোদমে শুরু হলেও শিলান্যাস হয়েছিল ২০০৯ সালে। শিলান্যাস করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় ৪৫কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটির ৮৪ শতাংশই টানেল। সেই টানেলেই বারবার ঘটছে বিপত্তি।