তপন বকসি, মুম্বই: প্রয়াত প্রবীণ অভিনেত্রী স্মৃতি বিশ্বাস (Smriti Biswas)। একসময় মুম্বইয়ে (Mumbai) রাজপাট চালানো এই অভিনেত্রী ৩ জুলাই মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) নাসিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০০ বছর।
পাঁচের দশকের হিন্দি ছবির প্রখ্যাত প্রযোজক পরিচালক এসডি নারঙ্গের সহধর্মিনী ছিলেন তিনি। ১৯৩০ সালে শিশু শিল্পী হিসেবে মাত্র ১০ বছর বয়সে ছায়াছবির আঙিনায় পা রাখেন স্মৃতি বিশ্বাস। ছবির নাম ছিল ‘সন্ধ্যা’। ১৯৩০ থেকে ১৯৬০। এই ৩০ বছরের কর্মজীবনে তিনি কাজ করেছিলেন ভি শান্তারাম, গুরু দত্ত, বি আর চোপড়া, বিমল রায়দের মতো প্রযোজক- পরিচালকদের সঙ্গে। অভিনয় করেছিলেন রাজ কাপুর, দেব আনন্দ, সুনীল দত্ত, কিশোর কুমার, ধর্মেন্দ্র, জিতেন্দ্র, অমিতাভ বচ্চনদের সঙ্গে।
![](https://uttarbangasambad.com/wp-content/uploads/2024/07/smriti-biswas2.gif)
১৯৩০ সালে বাংলা ছবি দিয়ে নিজের অভিনয় জীবন শুরু করলেও ১৯৪০-এর শুরুতে অবিভক্ত ভারতবর্ষের লাহোরে অভিনয়ের খোঁজে পাড়ি দেন প্রবীণ অভিনেত্রী। এখনকার বলিউডের অভিনেতা আদিত্য পাঞ্চোলির জ্যাঠামশাই প্রযোজক দলসুখ পাঞ্চোলি ১৯৪৩ সালে ‘ধামাকে’ নামে হিন্দি ছবিতে প্রথম সই করান স্মৃতি বিশ্বাসকে। এরপর ১৯৪৪ সালে আরেকটি হিন্দি ছবি ‘নয়ী ভাবি’-তে অভিনয় করেন। এরপর ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি চলে আসেন কলকাতায়। তখন থেকেই তিনি কলকাতা এবং তৎকালীন বম্বেতে তাঁর অভিনয় জীবনের ধারা বজায় রাখেন। কলকাতায় হেমেন বসুর ‘দ্বন্দ্ব’, নিরক্ষর, অনুরাগ, আবু হাসান, অভিশপ্ত-র মতো ছবিগুলোতে যেমন কাজ করেছেন, তেমনই একই সময়ে বম্বেতে কাজ করেছেন ভি শান্তারাম (তিন বাত্তি অউর চার রাস্তা), গুরু দত্তদের ছবিতে।
১৯৫০ এ কাজ করেছেন বিমল রায়ের হিন্দি ছবি ‘পহেলা আদমি’-তে। অভিনয় করেছেন শম্ভু মিত্রের বাংলা ছবি ‘একদিন রাত্রে’-র হিন্দি রূপান্তর রাজ কাপুরের ‘জাগতে রহো’-তে। পাঁচের দশকের শুরু থেকেই পুরো এক দশক চুটিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। বিআর চোপড়ার পরিচালনায় ১৯৫৪ সালের ‘চাঁদনি চক’, ১৯৫৫ সালের ‘রাজকন্যা’, ১৯৫৫ সালেই ‘বাপরে বাপ’, ১৯৫৬ সালে জাগতে রহো’, ১৯৫৬ সালে গুরু দত্তের পরিচালনায় ‘সৈলাব'(অভিনেত্রী গীতা বালির সঙ্গে), পরিচালক এ. আর. কারদারের ছবি ‘ভাগম ভাগ’-এ কিশোর কুমারের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন। ১৯৫৮ সালে নিজের স্বামী প্রযোজক, পরিচালক এস ডি নারঙ্গের ছবি ‘দিল্লি কা ঠগ’ এর মতো ছবিগুলিতে কাজ করেন। পাঁচের দশকের শেষ দিকে ১৯৫৯ সালে কলকাতায় মৃণাল সেনের ছবি ‘নীল আকাশের নীচে’-তে অভিনয় করেন। অবিভক্ত ভারতের প্রথমে লাহোরে পরে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নামকরা প্রযোজক পরিচালক এসডি নারঙ্গকে ১৯৬০ সালে বিয়ে করেন স্মৃতি বিশ্বাস। তাদের দুই পুত্র রয়েছে। স্মৃতিকে বিয়ে করার সময়ই নারঙ্গ চেয়েছিলেন বিয়ের পর স্মৃতি অভিনয় ছেড়ে পুরোপুরি সংসারে মন দিন। তাই ১৯৬০ সালে ‘মর্ডান গার্ল’ নামের হিন্দি ছবিতে অভিনয় করার পর অভিনয় জগত থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন অভিনেত্রী। ১৯৮৬ সালে ৬৭ বছর বয়সে প্রয়াত হন এসডি নারঙ্গ।
শেষবয়সে আর্থিক কষ্টের সম্মুখীন হয়ে সমস্যাতেই কাটাতে হয়েছে স্বর্ণযুগের এই অভিনেত্রীকে। জীবন সায়াহ্নে গোরেগাঁওয়ের একটি প্রায় অন্ধকার এক চিলতে ঘরে ঠাঁই হয় তাঁর। তারপরই স্মৃতি বিশ্বাস চলে আসেন মহারাষ্ট্রের নাসিকে। এবছরের ১৭ ফেব্রুয়ারির সেখানেই নিজের শততম জন্মদিন পালন করার সাড়ে চার মাস পর বার্ধক্য জনিত অসুস্থতার কারণে চলে গেলেন অভিনেত্রী। শতায়ু অভিনেত্রীর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন বলিউড পরিচালক হনসল মেহেতা। সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনেত্রীর সিনেমার ছবির এক দৃশ্য শেয়ার করে লিখেছেন, ‘এবার শান্তিতে থাকুন স্মৃতিজি। আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে তোলার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।’