শিলিগুড়ি: কখনও সে আইসি রুমের দরজার পাশে বসে নজরদারিতে। কখনও আবার লকআপের সামনে বসে আসামীরা কি করছে, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাখছে খেয়াল। তারমধ্যেই চলছে বিস্কুট খাওয়া। নজরদারির ফাঁকে একটু ঘুমিয়ে পড়লেও দোষ নেই? মাটিগাড়া থানায় গিয়ে আইসি রুম কিংবা লকআপ রুমের সামনে গেলেই তার দেখা মেলে। আবার কখনও কমপ্লেন নেওয়ার জায়গাতেও তাকে বসে থাকতে দেখা য়ায়। রাগী পুলিশকর্তাদের মুখেও অতি সহজেই হাসি ফোটানোর পদ্ধতি জানে সে। সারমেয় কালু থানার সকলেরই নয়নের মণি। থানাতেই তার বড় হওয়া। থানাই তার কাছে নিরাপদ আশ্রয়।
সম্প্রতি থানায় যেতেই আইসি রুমের সামনে দেখা গেল কালু-কে। আরাম করে রুমের দরজার একপাশে বসেছিল। শত ব্যস্ততা নিয়ে পুলিশকর্মীরা যাওয়া-আসা করার সময় তাঁদের নজর একবার হলেও গিয়ে পড়ছিল তার দিকে। কালু কবে থেকে এখানে রয়েছে? প্রশ্ন করতেই মুখে চওড়া হাসি এক পুলিশকর্মীর। তিনি বললেন, পাঁচ বছর ধরে কালু এখানেই রয়েছে। কালুর জন্ম হয়েছিল থানার বাইরেই। তবে ধীরে ধীরে থানায় আসতে শুরু করে কালু। তারপর কখন যে সবাইকে আপন করে নিল, মনে করতে পারছেন না কেউই। কালুর করুণ মুখের মায়ায় জড়িয়ে কেউই আর তাঁকে তাড়াননি। বিভিন্ন সময় আইসি-র বদল হয়েছে । কালু থেকে গিয়েছে সবার প্রিয়ই। আচ্ছা, কালুর খাওয়ার রুটিন কী? মেসে রান্না হওয়া খাবারের কিছুটা ভাগ থাকে কালু-র জন্য। কালু পুলিশকর্মীদের মায়ার বাঁধনে এমনভাবেই জড়িয়ে ফেলেছে য়ে পুলিশকর্মীরাও দুপুর-রাতে খাওয়ার সময় পাত থেকে কিছুটা খাবার দিয়ে থাকেন তাকে।
সম্প্রতি মাটিগাড়া থানায় ডিউটি শুরু করেছেন এক পুলিশকর্মী। তিনি সংযোগ করলেন, থানায় কেউই ওকে কিছু বলে না। আমরা যা খাই ওকে সেটাই দেওয়া হয়। খাওয়ার নিয়ে ওর আলাদা কোনও চাহিদা নেই। তবে বিস্কুট দেওয়ার একটা অলিখিত নিয়ম রয়েছে। দিনে কোনও না কোনও সময় পুলিশকর্মীরা তাকে বিস্কুট দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ আবার থানায় ঢুকেই কালু-কে বিস্কুট দেওয়া অজান্তে প্রথম কাজ করে নিয়েছে। যাকে নিয়ে এত আলোচনা, সে অবশ্য রয়েছেই আপন মনে। আইসি রুমের সামনে থেকে উঠে চলে গিয়েছে কমপ্লেন বুথের সামনে। নিজের মতন করে সেও চুপ করে বোঝার চেষ্টা করল, অভিযোগকারিদের সমস্যার কথা। কিছুটা দূরে সাদা পোশাকের কয়েজন পুলিশের সঙ্গে বসেছিলেন থানার আইসি সমীর দেওসরাই। স্বস্তির সুরে বললেন, কালুকে শুধু আমিই না, থানার সবাই ভালোবাসে। কালুর কথা উঠতেই স্বস্তির হাসি আইসির পাশে থাকা সাদা পোশাকের পুলিশের মুখেও।