ডালখোলা: মারণ রোগ ক্যানসারের চিকিৎসার পর শারীরিকভাবে রোগীরা সেরে উঠলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন অনেকেই। চিকিৎসার পর রোগীর মাথার চুল উঠে গিয়ে তাঁরা সমাজে আর পাঁচজনের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। তাঁদের এই কষ্ট কিছুটা লাঘব করতে চুল দান করে থাকেন অনেকেই। বিষয়টি জানার পর, ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের মুখে হাসি ফোটাতে নিজের চুল দান করলেন ডালখোলার নবম শ্রেণির ছাত্রী সৌরজা গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর এই উদ্যোগে খুশি মা বাবা থেকে শুরু করে প্রতিবেশীরাও।
সৌরজা বর্তমানে ডালখোলার একটি বেসরকারি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। বাবা গৈরিক গঙ্গোপাধ্যায় পেশায় আইনজীবী ও বিজ্ঞান কর্মী এবং মা দীপান্বিতা গঙ্গোপাধ্যায় গৃহবধূ। পড়াশোনার পাশাপাশি সৌরজা একজন ভালো কিক বক্সার। সৌরজার কথায়, শিলিগুড়িতে একটি বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনা করার সময় সেই স্কুলের এক শিক্ষিকা ক্যানসার আক্রান্ত হন। চিকিৎসার পরে সেই শিক্ষিকা সুস্থ হলেও তাঁর মাথার চুল উঠে যায়। তখন সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। এই সময় এই বিষয়টি তাঁর ছোটো মনকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল। এরপর সৌরজা বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাহায্যে জানতে পারে চুল দানের বিষয়টি। তারপর থেকেই সে সিদ্ধান্ত নেয় সেও ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের মুখে হাসি ফোটাতে তার চুল দান করবে। তাঁর এই ইচ্ছার কথা মাকে জানতেই তিনি আরও উৎসাহিত করেন। কিভাবে এবং কাদের মাধ্যমে চুল দান করা যায় তা জানতে শুরু হয় অনুসন্ধান। এরপর মহারাষ্ট্রের একটি বেসরকারি সমাজসেবী সংস্থার খোঁজ মেলে, যারা ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের চুল দানের বিষয়টি নিয়ে কাজ করে। সৌরজার মা দীপান্বিতা দেবী জানান, মেয়ের এই চুল দানের ইচ্ছার কথা জানতে পেরে আমরা তাঁকে আরও উৎসাহ দিয়েছি। পাশাপাশি একটি সমাজসেবার সংস্থা থেকে চুল দানের পুরো প্রক্রিয়াটি খোঁজ নেওয়া হয়। তাদের কাছ থেকে জানতে পারি কিভাবে চুল কাটতে হবে এবং কিভাবে তা তাদেরকে পাঠাতে হবে। সেই মতো মঙ্গলবার আমার মেয়ের ১৪ ইঞ্চি চুল কেটে তা কুরিয়ারের মাধ্যমে মহারাষ্ট্রে ওই সমাজসেবী সংস্থার কাছে পাঠানো হয়।
অন্যদিকে সৌরজা জানায়, বিষয়টি আমি আমার বান্ধবীদের যখন জানিয়েছিলাম তখন তাদের মধ্যে অনেকেই আমাকে বলেছিল এত বড় চুল কেটে দিবি! আমি মনে করি আমার সামান্য চুল দিয়ে যদি কারও মুখে হাসি ফোটাতে পারি তবে সেটা আমার কাছে অনেক বড় পাওনা। আমি আমার অনেক বান্ধবীদেরও চুল দান করার জন্য বলেছি। তাদেরকে বুঝিয়েছি চুল কেটে দিল তা আবার কিছু সময়ের মধ্যে বড় হয়ে যাবে, কিন্তু সেই চুল দিয়ে কারও কষ্ট কিছুটা ভাগ করে নিলে তার আনন্দই আলাদা।