ময়নাগুড়ি: জন্ম থেকেই দু’টো পা অচল। তবু একটুও কমেনি মনের জোর। স্বনির্ভর হয়ে ওঠার তাগিদে জীবন সংগ্রামে সামিল হয়েছে ময়নাগুড়ি (Maynaguri) শহরের ফার্ম শহীদগড় এলাকার বাসিন্দা পার্থ। সকাল হতেই অন্যান্যদের মতো সে টোটো নিয়ে বেরিয়ে পরে শহরের রাস্তায়। যাত্রী নিয়ে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে আসা যাওয়া করতে দেখা যায় বিশেষভাবে সক্ষম (Specially Abled) পার্থকে।
পার্থর জীবন বাকিদের থেকে কিছুটা হলেও আলাদা। পার্থর মা মালা সাহার কথায়, ছেলে ছোটবেলা থেকেই সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত, নার্ভের সমস্যার দরুণ দুটো পা অচল। এর আগে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতাতেও। কিন্তু তাতেও কোনও স্থায়ী সুরাহা মেলেনি। চিকিৎসক জানিয়ে দিয়েছিলেন পার্থর পক্ষে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব। তবুও ডাক্তারের পরামর্শ মতো ফিজিওথেরাপি (Physiotherapy) করা হয়। এর ফলে কিছুটা উন্নতি হলেও হাঁটাচলা সম্পূর্ণভাবেই বন্ধ, ক্রাচে ভর করেই চলতে হচ্ছে পার্থকে।
পার্থের বাবা পূর্ণেন্দু সাহা বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিক (Higher Secondary) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পার্থ কলেজেও ভর্তি হয়। কিন্তু যাতায়াতের সমস্যার দরুন প্রথম বর্ষ থেকেই কলেজ জীবন থেকে সরে আসতে হয়।” কলেজ ছাড়ার পর বিভিন্ন জায়গাতে কাজের জন্য খোঁজ চালাচ্ছিল পার্থ। অবশেষে পার্থর বাবা কষ্ট করে একটা টোটো কিনে দেন ছেলেকে। প্রায় চার বছরেরও বেশি সময় ধরে সেই টোটোই চালাচ্ছে ছেলে। তবে বেশি সময় টোটোতে বসে থাকার কারণে শরীরে দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা। তবুও সব সমস্যাকে অগ্রাহ্য করে সংসারের হাল ধরতে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে সে।
পার্থর এক প্রতিবেশী তথা সহকর্মী আরেক টোটোচালক বাপি সরকারের কথায়, “আমাদের সঙ্গেই টোটো চালায় পার্থ। রাস্তায় চলাফেরায় অনেক সময় সমস্যা হলে সকলেই সহযোগিতা করি।“ শহীদগড় এলাকার আরেক যুবক ট্রয় রায়ের কথায়, “পার্থ আমাদের এলাকার হার না মানা এক যোদ্ধা, হাটাচলার ক্ষমতা হারিয়েও যেভাবে টোটো চালিয়ে জীবন সংগ্রামে সামিল হয়েছে তা সত্যি প্রশংসনীয়।”
এই বিষয়ে পার্থকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে জানায়, “চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গাতে চেষ্টা চালিয়ে ছিলাম। কিন্তু সেভাবে আশানুরূপ কিছু না হওয়াতে আপাতত টোটো চালাচ্ছি। শরীরে মাঝে মাঝে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে স্থায়ী কোনো কাজ পেলে সেক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তি মিলত।”