বালুরঘাট: বেঁকে যাওয়া মেরুদণ্ডকে সঙ্গী করে উচ্চমাধ্যমিকে ৪৮২ নম্বর পেয়ে তাক লাগাল বালুরঘাটের জয়দীপ সামন্ত। সে গত তিন বছর ধরে অ্যানকিওলজিং স্পন্ডেলাইটিসের সঙ্গে লড়াই করছে। মাত্র ৫ নম্বরের জন্য এবছর উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যের মেধা তালিকায় আসতে পারেনি বালুরঘাটের উত্তরায়ন এলাকার বাসিন্দা জয়দীপ। ফলে তার আফশোস কম নেই। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে রেখে অধ্যয়নের উপর তার গভীর আস্থা।
মূলত বাংলা ও ইতিহাসে তার নম্বর অনেকটাই কম এসেছে বলে আক্ষেপ জয়দীপের। ৫০ শতাংশ বিশেষভাবে সক্ষম সে। কিন্তু পড়াশোনার কাছে সবই তুচ্ছ তার জন্য। শারীরিক সমস্যার জন্য স্কুলের টেস্ট পরীক্ষা ঠিকমতো দিতে পারেনি সে। তখন শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিল। পরীক্ষার সময় ডান হাতে লিখতে তার যথেষ্ট সমস্যা হয়েছে। বাঁহাত দিয়ে ডান হাত চেপে মাথা বেঞ্চে ঠেকিয়ে সে পরীক্ষা দিয়েছে। বালুরঘাট হাই স্কুলে কলাবিভাগে পড়াশোনা করে পরীক্ষায় ৯৬.৪ শতাংশ নম্বর এই কৃতী ছাত্রের।
তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী অসিত সামন্ত বলেন, ‘বেলুড়ে ইতিহাসে সাম্মানিক স্নাতক নিয়ে পড়ার ইচ্ছে তার। সে যেভাবে এগোতে চায়। তাতেই আমরা তার সঙ্গে আছি। তার এখনও ফিজিওথেরাপি চলছে।’ জয়দীপ বলে, ‘মোবাইলের সঠিক ব্যবহার করতে হবে। পড়াশোনার একঘেয়েমি কাটাতে আমি মোবাইলে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিষয় দেখতাম। দিনে ১০ ঘণ্টাও পড়েছি। গত চার বছর ধরে ইউপিএসসি প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামীতে আইএস অফিসার হওয়ার ইচ্ছে।’
বালুরঘাট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৃজিৎ সাহা বলেন, ‘ইচ্ছাশক্তির ওপর ভর করে তার এই অভাবনীয় ফল শুধু পড়ুয়াদের নয় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে আমাকে ও অন্য শিক্ষকদেরও। তিন বছর আগেও জয়দীপের উচ্চতা ছয় ফিটের উপরে ছিল। কিন্তু তার মেরুদন্ড বেঁকে যাওয়ায় এখন উচ্চতা কয়েক ইঞ্চি কমে এসেছে। প্রথম প্রথম হাঁটতে পারলেও এখন আর ঠিকমতো হাঁটতে পারে না। অনেক সরঞ্জাম ও টোটোকে সঙ্গী করে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে কোনও অজুহাত ছাড়াই সে স্কুলে পৌঁছে যেত। তার লড়াইকে কুর্নিশ জানাই।’