রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: মাদক মামলায় কারাকর্মীর যোগ থাকার ঘটনায় এবার তদন্তে নামল রাজ্যের ভিজিলেন্স কমিশন। নবান্নের নির্দেশে ভিজিলেন্স কমিশনের উত্তরবঙ্গ শাখার আধিকারিকরা তদন্ত শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে কমিশনের পক্ষ থেকে নিউ জলপাইগুড়ি থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে বেশ কিছু তথ্য নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শিলিগুড়ি (Siliguri) মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট থেকেও বেশ কিছু তথ্য নেওয়া হচ্ছে।
ভিজিলেন্স কমিশনের একজন ইনস্পেকটর পদমর্যাদার আধিকারিক ঘটনার তদন্ত করবেন। অভিযুক্তের সম্পত্তির হিসেব নেওয়া হবে। তার সঙ্গে আর কার কার সম্পত্তি বেড়েছে সেই সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি গোয়েন্দ দপ্তরও (ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট বা ডিডি) তদন্ত চালিয়ে যাবে। তবে শিলিগুড়ি পুলিশের ডিডির তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অভিযোগ, ডিডির হাতে মামলা যাওয়ার পরেই তদন্ত প্রক্রিয়া গতি হারিয়েছে। নয়তো এতদিন উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অনেক বড় চিকিৎসক, ল্যাব কর্মী গ্রেপ্তার হয়ে যেতেন।
ডিডির হাতে যে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে তাতে যে কোনও সময়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা যেতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। তদন্তের গতিপ্রকৃতি অন্যপথে ঘুরিয়ে দিতেই ডিডির এই ধীরে চলো নীতি কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে এই বিষয়ে ভিজিলেন্স কমিশন কিংবা শিলিগুড়ি পুলিশের কোনও কর্তা প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি।
গত বছরের ১ অগাস্ট ব্রাউন সুগার সমেত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছিল শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ, বাগডোগরা থানা এবং নিউ জলপাইগুড়ি থানার পুলিশ। সেই ঘটনায় শিলিগুড়ির বিশেষ সংশোধনাগারের একজন কারারক্ষীও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ। অভিযোগ, এক ক্যানসার আক্রান্ত ব্যক্তির তথ্য জাল করে তিনজন মাদক কারবারির হাইকোর্ট থেকে জামিন করিয়েছেন অভিযুক্ত। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত কারাকর্মী ছাড়াও উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক, ল্যাবরেটরি কর্মী এবং সংশোধনাগারের এক চিকিৎসকেরও নাম জড়িয়েছে। মেডিকেল থেকে তৈরি হওয়া নকল নথির ওপর সংশোধনাগারের চিকিৎসকের স্বাক্ষর এবং ছাড়পত্রের পরেই তিন মাদক কারবারির হাইকোর্ট থেকে জামিন হয়েছিল।
এই সমস্ত তথ্য রয়েছে পুলিশের হাতে। সংশোধনাগারের চিকিৎসককে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছিল। কিন্তু উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের যে সমস্ত বিভাগের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে জাল নথিতে স্বাক্ষর করার অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের একবার নোটিশ দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি।
কাউকে আড়াল করতেই কি তদন্ত ধীরগতিতে চলছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। শহরের পুলিশকর্তাদের একাংশের মতে, সঠিক তদন্ত হলে শুধু চিকিৎসকই নয় কারা বিভাগেরও কয়েকজন আধিকারিক গ্রেপ্তার হতে পারেন। তাই গোটা তদন্ত প্রক্রিয়াই বর্তমানে প্রশ্নের মুখে।