তুফানগঞ্জ: ডায়াবিটিস রোগীদের মিষ্টি খেতে না পারার আক্ষেপ সুগার ফ্রি তুলসীর মধ্য দিয়ে মিটতে চলেছে। এটি স্টিভিয়া বা মিষ্টি তুলসী পাতা নামে পরিচিত। ‘ভেষজ সুরক্ষা’ প্রকল্পে উৎসাহিত হয়ে মহিলা কল্যাণ সংঘ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর এক সদস্য তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের নাটাবাড়ির চাড়ালজানিতে প্রথম মিষ্টি তুলসী চাষ শুরু করেন। উত্তরবঙ্গের অন্য কোথাও এখনও এই চাষ শুরু না হলেও মিষ্টি তুলসীর এখন আকাশছোঁয়া চাহিদা। ফলে গোটা উত্তরবঙ্গ ও নিম্ন অসমজুড়ে এই তুলসীর চারা ও তার শুকনো পাতা বিক্রি করে কৃষকরা লাভের মুখ দেখছেন। ফলে মিষ্টি তুলসী চাষে ঝোঁক বাড়ছে নাটাবাড়িতে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, চিনির থেকে প্রায় ২০০ গুণ বেশি মিষ্টি এই পাতায় রক্তে সুগারের মাত্রা কোনওভাবেই বাড়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে ডায়াবিটিস রোগীরাও এ ব্যাপারে আশ্বস্ত হচ্ছেন।
নাটাবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালের সিনিয়ার আয়ুর্বেদিক মেডিকেল অফিসার বাসবকান্তি দিন্দা বলেন, ‘স্টিভিয়া বা মিষ্টি তুলসীর পাতায় ‘স্টিভিওসাইড’ নামক পদার্থের উপস্থিতির কারণে এই পাতার নির্যাস এত মিষ্টি। তবে এতে ক্যালোরির পরিমাণ শূন্য। প্রোটিন, ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খাদ্যতন্তু থাকায় এই পাতার পুষ্টিগুণ খুব বেশি। এটি ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলত্ব, অজীর্ণ, বুকজ্বালা, দাঁতের ব্যথা, তামাক জাতীয় নেশা কাটাতে খুবই উপকারী।
বাসবকান্তির সহযোগিতায় চাড়ালজানি গ্রামের মলিনা সরকার সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম থেকে উন্নতমানের মিষ্টি তুলসীর চারা এনে প্রথম এই চাষ শুরু করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘খুব সহজেই মিষ্টি তুলসী চাষ করা সম্ভব। এতে সারের প্রয়োজন হয় না। ২০২১ সালে এক কাঠা জমিতে স্টিভিয়া চাষ শুরু করেছিলাম। একবার চাষ করে দু’বছর পর্যন্ত এটির শুকনো পাতা বিক্রি করেছি। চাহিদা বাড়ায় এবার দুই কাঠা জমিতে চারা লাগিয়েছি। প্রতি মাসে প্রায় তিন কেজি করে শুকনো পাতা পাচ্ছি। তিন হাজার টাকা কেজি দরে এটি বিক্রি হচ্ছে। বিক্রির ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে না। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, অসমের বাসিন্দারা বাড়ি থেকেই তুলসীর শুকনো পাতা ও চারা সংগ্রহ করছেন।’
মলিনার সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে গ্রামের শান্তি দাস ও ফুলতি বর্মন এই মিষ্টি তুলসী চাষ শুরু করেছেন। শান্তি জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেন। এর শুকনো পাতা কোচবিহারের সমবায়িকা ও বিভিন্ন আয়ুর্বেদ ওষুধ দোকানে বিক্রি করছেন।
ভেষজ সুরক্ষা প্রকল্পের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে নরম পানীয়, প্রক্রিয়াজাত ফলের রস, আইসক্রিম, সস, জ্যাম-জেলি, বেকারি, কুকিজ, রুটি, কেক, বিস্কুট ইত্যাদি তৈরিতে এই স্টিভিয়ার ব্যবহার বাড়ছে। ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাসোসিয়েশন (এফডিএ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবিষয়ে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে। ২০২১ সালে ‘ভেষজ সুরক্ষা’ প্রকল্পের মাধ্যমে একজন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা এই চাষ শুরু করার পর লাভের পরিমাণ দেখে এখন মোট তিনজন এই চাষ করছেন। বহুবর্ষজীবী িবরুৎ জাতীয় এই গাছ দুই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতার উভয়দিক খসখসে, ফুলগুলি সাদা ও ছোট। বাংলায় স্টিভিয়াকে মধু তুলসী, মিষ্টি তুলসী, চিনি তুলসী ইত্যাদি নামেও মানুষে চেনেন।