রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: যানজট সমস্যায় জর্জরিত শৈলশহর দার্জিলিং(Darjeeling)। এর জেরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এই যানজট নিয়ে এবার শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তর্জা। বিরোধী শিবির মানুষের দুর্ভোগের জন্য শাসকপক্ষকে দুষছে। শাসকদলও যে প্রশাসনিক পদক্ষেপে খুশি, তেমনটা নয়। প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ করলে যানজট সমস্যা অনেকটাই কমতে পারে বলে অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার (বিজিপিএম) মুখপাত্র এসপি শর্মা দাবি করেছেন। আবার যানজট সমস্যার কারণ হিসেবে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের (ডিএইচআর) অতিরিক্ত টয়ট্রেন(Toy Train) চালানোকেও দায়ি করেছেন অনেকেই।
দার্জিলিং পুলিশের ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ (টাউন) রামগোপাল মণ্ডল বলেছেন, ‘যানজট মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হচ্ছে। রাস্তায় প্রচুর ফোর্স মোতায়েন করে অযথা পার্কিং বন্ধ করা, যানজট হলে দ্রুত সেটা সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু দার্জিলিংয়ে যেখানে আড়াই হাজার গাড়ি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, সেখানে প্রতিদিন ২৫ হাজার গাড়ি ঢুকছে, যার ফলে সমস্যা বাড়ছে।’
প্রচণ্ড গরমে জ্বলছে সমতল। এই গরম থেকে বাঁচতে দলে দলে মানুষ পাহাড়ে ছুটছেন। ফলে দার্জিলিংয়ে বর্তমানে পর্যটকদের তিলধারণের জায়গা নেই। প্রতিটি হোটেলেই থিকথিকে ভিড়। আর পর্যটকদের মাত্রাতিরিক্ত যাতায়াতের ফলে পাহাড়ি পথে গাড়ির সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। কিন্তু রাস্তা সেভাবে প্রশস্ত না হওয়ায় নিত্য যানজটে ভুগতে হচ্ছে পর্যটকদের। সোনাদা পার করার পরেই যে যানজট শুরু হচ্ছে, তা ঘুম হয়ে দার্জিলিং শহর পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। ছোট ভাড়ার গাড়িতে দার্জিলিং যেতে খুব বেশি হলে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগলেও এই যানজটের জেরে দ্বিগুণেরও বেশি সময় লাগছে। ফলে চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন পর্যটকরা। গাড়িচালকদের বক্তব্য, ‘এমনিতে বেশি গাড়ি চলছে। তার উপরে পর্যটকের ভিড় বাড়ার সময় থেকে ডিএইচআর যেভাবে টয়ট্রেনের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি করেছে তার জেরেও যানজট হচ্ছে।’
যানজট সমস্যাকে কেন্দ্র করে শাসকপক্ষকে দুষছে বিরোধী হামরো পার্টি। দার্জিলিং পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান হামরো পার্টির রিতেশ পোর্টেল বলেন, ‘শাসকদলের চূড়ান্ত ব্যর্থতা। দার্জিলিং পুরসভা এবং পুলিশের ব্যর্থতার জেরেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শুধু পর্যটকরাই নন, এখানকার মানুষও প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে দার্জিলিংয়ে আসেন। তাঁরাও যানজটের জেরে চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন।’
কেন যানজট মোকাবিলায় প্রশাসনিক পদক্ষেপ হচ্ছে না, কেন রাস্তার পাশে জবরদখলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে না সেই প্রশ্ন তুলেছেন রিতেশ। পাশাপাশি যেভাবে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে (ডিএইচআর) ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়েছে তার জেরেও যানজট হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
বিজিপিএমের মুখপাত্র এসপি শর্মার বক্তব্য, ‘গত বছর মে মাসের শেষ সপ্তাহে দার্জিলিংয়ে একই পরিস্থিতি হয়েছিল। সেই সময় প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করেছিল। রাস্তার পাশে যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখলে আইনি পদক্ষেপ করা এবং হেল্পলাইন নম্বরও চালু করেছিল। এবারও প্রশাসনের সেই পদক্ষেপ করা উচিত।’ তবে, বিরোধীদের বক্তব্যকে খণ্ডন করে তিনি বলেছেন, ‘বিরোধীদের কাজই শুধু সমালোচনা করা।’
অন্যদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএইচআরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘পর্যটকের ভিড় সামাল দিতেই অতিরিক্ত জয় রাইডের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’