অভীক পুরকাইত, কলকাতা: ফুচকা বলতেই আমরা জানি আলু মাখা সঙ্গে টক জল। বড়জোড় টক জল ছাড়া নানা স্বাদের জল পেতে পারি। কিন্তু কখনও চিকেন ফুচকা, লোটে ফুচকা, চিংড়ি ফুচকা খেয়েছেন কি? শুনতে অবাক লাগলেও, বর্তমানে এই ধরণের ফুচকাও পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, এই গ্রামে গেলে যেদিকেই হাত বাড়াবেন সেদিকেই ফুচকার ছড়াছড়ি। এমন জায়গার খোঁজ পেতে হলে বেশি দূর যেতে হবে না। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার অন্দরে এরকম একটি জায়গার খোঁজ পেয়ে যাবেন আপনিও। কাঁচরাপাড়া–যেটি বিখ্যাত রেল ওয়ার্কশপ হিসেবে। সেখানেই যে শুধু ফুচকাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এক ঐতিহাসিক জায়গা, সেই সম্পর্কে অনেকেরই জানা নেই। কাঁচরাপাড়া রাসমণি ঘাট সংলগ্ন এলাকায়, শহিদপল্লি যেন ফুচকার স্বর্গ।
কাঁচরাপাড়ার শহিদপল্লী অনেকের কাছেই ফুচকা পাড়া নামে খ্যাত। এই জায়গায় হাত বাড়ালেই শুধু ফুচকা আর ফুচকা। বাহারি ফুচকার ছড়াছড়ি। কী নেই? চকোলেট ফুচকা, ঘুগনি ফুচকা, চিকেন ফুচকা ছাড়াও এখানে সবথেকে আকর্ষণীয় যে ফুচকা সেটি হল লোটে ফুচকা, চিংড়ি ফুচকা। যদিও তাঁরা এই জায়গাকে ফুচকা পাড়া কিংবা ফুচকা গ্রাম বলতে নারাজ। শহিদপল্লির সঙ্গে জড়িয়ে আছে মানুষের হাজারো স্মৃতি। তাই শুদ্ধ বাংলায় এখনও তাঁরা শহিদপল্লির মানুষ। কিন্তু গোটা এলাকায় বাড়িতে বাড়িতে রকমারি ফুচকা ছাড়া আর কিছুই নেই। সকাল থেকে ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায় সেখানে। ভোর থেকে লেচি বানিয়ে তারপর ফুচকা ভাজা, তারপর একে একে সমস্ত কাজ সেরে নিয়ে বেলা ৩টা গড়াতেই ফুচকা নিয়ে নিজেদের বাড়ির সামনে বিক্রির জন্য বসে পড়া। ফুচকা বিক্রেতা রঞ্জিত বালা, সুজাতা পালরা জানান, দীর্ঘ ২০-২৫ বছর ধরে তাঁরা এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। ফুচকার প্রতি তাঁদের ভালবাসা দেখার মতো। নিজেদের চেষ্টায় বানিয়েছেন কত রকমের ফুচকা। সারাদিনে কেউ বানাচ্ছেন ৪-৫ হাজার ফুচকা, আবার কেউ বানাচ্ছেন ১০-১২ হাজার ফুচকা। পাইকারী হিসেবে বিক্রিও করছেন আবার নিজেদের স্টলের জন্যও রয়েছে বাহারি ফুচকা। নানান জায়গা থেকে মানুষজন আসেন, কেউ ফুচকা কিনতে আবার কেউ ফুচকা খেতে। আর ফুচকার দাম শুনলে অবাক হতেই হবে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত ছিল ১০ টাকায় ১২টা ফুচকা আর এখন ১০ টাকায় ১০টা। অন্যান্য জায়গার থেকে সংখ্যায় কিন্তু অনেকটা বেশি। আর বাকি রইল দই ফুচকা কিংবা চাটনি ফুচকা অথবা ফ্লেভারের সেগুলির দাম হয় প্লেট অনুযায়ী।
নতুন ফুচকার আয়োজন, রেসিপির ভাবনা কীভাবে এসেছিল তাঁদের? উত্তরে তাঁদের বক্তব্য একটাই, নিজেদের মতো করেই সবটা সাজিয়েছি আমরা। রঞ্জিত বালার বক্তব্য, ‘সবাই যখন একরকম ফুচকা বিক্রি করছেন তখন আমার মনে হল একটু অন্যরকম কিছু বানাই। সেই থেকেই চিকেন ফুচকা এবং মাছের ফুচকার শুরু।‘ বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাড়িতেও এই এলাকার ফুচকা ব্যবসায়ীরা স্টল দেন বলে জানা গিয়েছে। তবে ফুচকা গ্রামের বাসিন্দাদের আক্ষেপ, সরকারিভাবে এখনও পর্যন্ত সেভাবে আর্থিক সহযোগিতা মেলেনি। ব্যবসা চালাতে বিভিন্ন বেসরকারি মাইক্রো ফাইনান্স সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে, টিকিয়ে রেখেছেন এই ফুচকা শিল্প।