বালুরঘাট: ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’, দলের নির্বাচনি কোনও পরিকল্পনা বা প্রস্তুতিতে না ডাকায় ফেসবুকে এমনই ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করলেন তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার। তাঁর এমন মন্তব্য ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে ঝড় তুলেছে।
সংগঠন থেকে সংসদীয় পদে প্রার্থীর অনুগামীদের ঠাঁই দেওয়া হয়েছিল। এবার প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই দলে পাত্তা পাচ্ছেন না বিপ্লব মিত্রের বিরোধী গোষ্ঠীর নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে নয়, অনুগামীদের নিয়ে তৈরি ‘টিম বিপ্লব’ই এই নির্বাচনি বৈতরণি পার করতে নেমে পড়েছে। যা নিয়ে জেলাজুড়ে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে চরম অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, দলের অভ্যন্তরে এই অবিশ্বাসের বাতাবরণে নিঃশ্বাস নিতে না পেরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে যা শুরু হয়েছে ফেসবুক যুদ্ধ। এরই মধ্যে মৃণাল সরকার ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে একটি টি’শার্টের বুকে লেখা, ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’। যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এই পোস্ট প্রসঙ্গে মৃণাল সরকার জানান, ‘দলের নির্বাচনি কোনও পরিকল্পনা বা প্রস্তুতিতে আমাকে ডাকা হয় না। আমি তাই নিজের বুথেই কাজ করছি।’
তবে ‘টিম বিপ্লব’ তত্ত্ব মানতে রাজি নন তৃণমূল নেতারা। বিপ্লব অনুগামী বলে পরিচিত জেলা কমিটি ও নির্বাচনি কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা তথা বালুরঘাট পুরসভার পুরপ্রধান অশোক মিত্র বলেন, ‘আমাদের দলে টিম বিপ্লব বলে কোনও শব্দ নেই। আমরা সবাই টিম মমতা, টিম তৃণমূলের। যাঁরা এই দল করে তাঁরা সকলেই আমাদের দলের প্রার্থীর হয়ে প্রচারে ঝাঁপিয়েছেন। কোথাও কোনও সমস্যা নেই।’
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় বিপ্লব মিত্র তৃণমূল রাজনীতিতে এক তারকা বলেই পরিচিত। ১৯৯৮ সালে যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল গঠন করেন সেই সময় রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বিপ্লব বাবু। ২০১১ সালে প্রথমবার বিধায়ক হন। ২০২১ সাল থেকে তিনি রাজ্যের মন্ত্রী। তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মলগ্ন থেকে দুই দফায় প্রায় ১৮ বছর জেলা সভাপতি থেকেছেন। এমন হেভিওয়েট নেতাকে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী না করে অর্পিতা ঘোষকে প্রার্থী করা হয়েছিল। তিনি জিতেছিলেন। কিন্তু পরের বার ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকে ভূমিপুত্রকে প্রার্থী করতে হবে বলে বিপ্লব অনুগামীরা জোর লড়াই শুরু করেছিল।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সাংসদ অর্পিতা ঘোষকে হারানোর দোষারোপ করে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। এরপরে তিনি অভিমানে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে ২০২০ সালে তিনি ফের তৃণমূলে ফিরে এসে দলের জেলা চেয়ারম্যানের পদ পান, পরে মন্ত্রী হন। শুধু তাই নয়, বর্তমানে তৃণমূলের জেলা কমিটি, পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরেই বিপ্লব অনুগামীদের আধিপত্য বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি যে নির্বাচনি কমিটি করা হয়েছে সেখানেও বিপ্লব অনুগামীদেরই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছেন বিরোধীরা। এই অবস্থার মধ্যে জেলার প্রচুর নেতা-কর্মীরা তাঁদের অবস্থান ঠিক করতে পারছেন না, চুপ করে রয়েছেন অনেকেই।